সিপিএমের একসময়ের যুব মুখ সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে দল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন দীর্ঘদিন হলো। এবার ভিডিও প্রমাণে অভিযুক্ত যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দল থেকে বাদ যেতে চলেছেন দুই যুব নেতা কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায় ও সৌম্যজিৎ রজক। বৃহস্পতিবার দিনভর কলকাতা জেলা কমিটিতে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল ওই দুজনের কীর্তি।
আপাতত তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে কৌস্তুভ ও সৌম্যজিৎকে। সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার জানান, বৃহস্পতিবার দলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান। কল্লোলবাবু আরও জানিয়েছেন, এর আগে অভিযুক্ত দুজনই দোষ স্বীকার করে দলকে চিঠি দিয়েছিলেন।
এরই পাশাপাশি এসএফআই সদস্য আত্রেয়ী সেনগুপ্ত এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মি টু আন্দোলনে সামিল হয়ে দলের একাধিক যুব নেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। সব মিলিয়ে আপাতত টালমাটাল আলিমুদ্দিন।
সিপিআইএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কৌস্তুভ ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিপক্ষে। চষে বেড়িয়েছিলেন বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র। রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন। আগামীতে অন্য যুব নেতাদের সঙ্গে কৌস্তুভও দলের মুখ হবেন, এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। এসএফআইয়ের একসময়ের দাপুটে নেতা সৌম্যজিৎও কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য। অনেকটাই পাকাপোক্ত রাজনীতিক হয়ে ওঠা এই যুব নেতাদের এমন হাল হল কেন? এই প্রশ্নে এখন উত্তাল দলীয় নেতৃত্ব। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কৌস্তুভ এই প্রসঙ্গে প্রথমে কিছু না বলতে চাইলেও পরে বিষয়টিকে "বোগাস" আখ্যা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Ritabrata Banerjee: ঝান্ডা না ধরলে তৃণমূল হওয়া যায় না?
দলের দুর্দিনে এভাবে একের একের পর এক যুব নেতা এভাবে ফেঁসে যাওয়ায় ফের এই রাজ্যে বাম রাজনীতিতে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। কিন্তু কে তুললো কৌস্তুভ-সৌম্যজিতের সেই ভিডিও, যার ফলে বহিষ্কারের মুখে তাঁরা? এটাও জোর আলোচনার বিষয় আলিমুদ্দিনে। সেইসঙ্গে রাজ্যে পরবর্তী প্রজন্মের কারা দলের দায়িত্ব নেবেন, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ এও মনে করছেন, দলের যুব নেতৃত্বকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ফাঁদে কেন পা দিলেন তাঁরা, তার সদুত্তর নেই।
কীভাবে বাইরে এল এই ভিডিও, তাও স্পষ্ট নয়। কেউ কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রকাশ করেছেন এটি? চাঞ্চল্যকরভাবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অনেকেই ঋতব্রতর বিরুদ্ধেই আঙুল তুলছেন। এই প্রসঙ্গে ঋতব্রত বলেন, "আমার এটা ভেবে খারাপ লাগছে, যে সিপিএম এখনও আমার ভূত দেখছে।"
এদিকে এসএফআই সদস্য আত্রেয়ী সেনগুপ্ত তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে সৌম্যজিত-সহ একাধিক যুব নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। কীভাবে তিনি যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ওই পোস্টে। ভিডিও কেলেঙ্কারির পর এবার এই 'মি টু' পোস্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সিপিআইএমের রাজ্য নেতৃত্বে।
সূত্রের খবর, দলের অভ্যন্তরে একপ্রকার আতঙ্ক ছড়িয়েছে, এরপর কার নাম উঠে আসতে পারে তা নিয়ে। একেই এরাজ্যে অবিরত রক্তক্ষরণের ফলে দলের বেশি কিছু অবশিষ্ট নেই, তার ওপর যুব নেতৃত্বের এই হাল হলে দলের দশা কী হতে পারে, তা ভেবেই আলিমুদ্দিনের কর্তাদের কপালে গভীর ভাঁজ পড়েছে। লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে অন্যরা যখন ঘর গোছাতে ব্যস্ত, তখন লাল বাহিনীর চিন্তাজনকভাবে শুরু ঘর সাফাইয়ের পালা।