রাজ্যের গেরুয়া দলে গনগনে বিদ্রোহের আঁচ। শনিবার কলকাতায় পোর্ট ট্রাস্টের গেস্টহাইসে 'বিদ্রোহী' নেতা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তারপরদিন, রবিবার নিজের কেন্দ্রের 'বেসুর' বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এখানেই শেষ নয়। সোমবার বনগাঁর ন'পাড়ায় চড়ুইভাতির আয়োজন করেছিলেন শান্তনু। সেখানেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা গিয়েছে যাঁদের তাঁরা সবাই বিজেপির নয়া রাজ্য কমিটি থেকে বাতিল নেতৃত্ব।
সোমবারের পিকনিকে হাজির ছিলেন সায়ন্তন বসু ও জয়প্রকাশ মজুমদার, রিতেশ তিওয়ারিরা। দেখা গিয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ও অশোক কীর্তনিয়াকেও।
পদ্মে 'বিদ্রোহী' আস্বস্তি জোড়াল হচ্ছে। এদিনের চড়ুইভাতি সেই অস্বস্তিতে নয়া মাত্রা যোগ করল। চড়ুইভাতিতে যোগ দিয়ে বনঘাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর সাফ দাবি করেন যে, বেসুরোদের সুরই আগামিতে মানুষের কাছে গৃহীত হবে। তাঁর কথায়, 'সুরের থেকে বেসুর শুনতে ভালো লাগে, সেটাই মানুষের কাছে গৃহীত হবে। যে অবস্থান বিজেপির, তার থেকে যদি বেসুরো সুর বাজে, তাহলে তাই গৃহীত হবে মানুষের মধ্যে। সেই অবস্থাই আগামীতে তৈরি হতে চলেছে।'
আরও পড়ুন- লটারিতে কোটিপতি তৃণমূলের ‘কেষ্ট’! কী বললেন অনুব্রত মণ্ডল?
বাংলার বিজেপিতে সম্প্রতি যে কমিটি তৈরি হয়েছে তাতে মতুয়াদের প্রতিনিধিত্ব নেই। বাদ পড়েছেআগের কমিটির একাধিক নেতা। এরপরই বিদ্রোহের আঁচ গেরুয়া দলে। সরাসরি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। গত শনিবার মুখে নাম না নিলেও তাঁর নিশানায় ছিলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। তৃণমূলের হয়েই অমিতাভবাবু কাজ করছেন বলে দাবি সাংসদের। হুঁশিয়ারি দিয়ে শান্তনু বলেছেন, 'দাবিপূরণ না হলে এই বিদ্রোহ ও আন্দোলন জারি থাকবে।'
এরপর শান্তনু ঠাকুরের সোমবারের বক্তব্যে স্পষ্ট যে আপাতত লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তিতিতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপির 'বেসুরো'রা।
তবে, রাজ্য বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার অবশ্য এই পিকনিকের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কে রয়েছে মানতে অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, 'রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও সামাজিক, তাই চড়ুইভাতিতে এসেছে। অন্যরাও এসেছেন।'
আরও পড়ুন- ‘কল্যাণ-অকল্যাণ’- হুগলিতে তোলপাড়, বাকযুদ্ধ টুইটের পর এবার পোস্টার লড়াই তৃণমূলে
যদিও বিজেপির বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের কথায়, 'কয়েকজন গত কয়েকদিন ধরেইএকটাঘোট পাকাচ্ছে। তাঁরাই সেই পিকনিকে গিয়েছেন।'
বিজেপিতে ফাটল কী তাহলে বাড়ছে? এদিনের চড়ুইভাতি নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'আমি জানি না ওখানে মতুয়া ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ কিনা। তবে আগেও এসব হত, এখনও হচ্ছে। মতামত শোনার জায়গা দল দিয়েছে, লোকও আছে।'
উল্লেখ্য, দলের 'বিদ্রোহী'দের সোচ্চারের পরই রবিবার বনগাঁ লোকালের কামরায় রাজ্য বিজেপির সাংগঠনির সাদারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী বিরুদ্ধে পোস্টার দেখা যায়। সেখানে লেখা ছিল 'পিকে-র টিমের দালাল অমিতাভ চক্রবর্তী হঠাও, বিজেপি বাঁচাও।' একই পোস্টার এদিন কলকাতার শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে লক্ষ্য করা গিয়েছে।