বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' তৈরির পর ৬ রাজ্যের ৭ আসনের উপনির্বাচনের ফল কিন্তু দেশব্যাপী চর্চায়। বিজেপি তিনটি উপনির্বাচনে জিতেছে। তার মধ্যে দুটি তাঁদেরই জেতা আসন ছিল। অন্যদিকে 'ইন্ডিয়া' জোট জিতেছে ৪টি আসনে। রাজনৈতিক মহল বলছে, 'ইন্ডিয়া' জোট কিন্তু মানুষের মন ছুঁয়েছে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের ডুমরি ও উত্তর প্রদেশের ঘোসি কেন্দ্রে 'ইন্ডিয়া' জোটের প্রার্থীর জয়লাভ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্যরকম ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বিজেপি বিরোধী দলের জেতা অন্য দুটি উপনির্বাচনের আসনে কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী হিসেবে লড়াই হয়নি। যেমন কংগ্রেস সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ে কেরলের পুথুপ্পল্লীর আসনটি ধরে রেখেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কাছ থেকে ধূপগুড়ি কেড়ে নিয়েছে। এখানেও 'ইন্ডিয়া' জোটে তাঁদের সঙ্গেই থাকা সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থীর কাছেই লড়েই জিততে হয়েছে তৃণমূলকে।
উপনির্বাচনে দেশব্যাপী ফলের মধ্যে বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশের ঘোসিতে জয় পাওয়াটা 'ইন্ডিয়া' জোটের জন্য সবচেয়ে বেশি স্বস্তির। বিজেপি এই কেন্দ্রে একজন প্রভাবশালী ওবিসি নেতা দারা সিং চৌহানকে প্রার্থী করেছিল। যিনি ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জিতেছিলেন।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল আরএলডি, কংগ্রেস এবং বামদের সমর্থিত এসপি বা সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী কেবল ঘোসি-বাসীর মনই জয় করেননি, এই ফল ২০২২ সালের চেয়েও ব্যাপকভাবে শতাংশের নিরিখে তাঁদের ভোটের মার্জিনও বাড়িয়েছে। ৪২% থেকে বেড়ে ৫৮%-এরও বেশি ভোট পেয়েছে সপা।
আরও পড়ুন- মাঝরাতে চরম নাটক! রুদ্ধশ্বাস পুলিশি হানায় গ্রেফতার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু
বিজেপি কমবেশি, তার ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছে কিন্তু এতেও দল হিসেবে ক্ষতির মুখেই পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, বিজেপি উত্তর প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে প্রচারের জন্য বর্ণভেদ তৈরি করে নেতাদের একটি গ্যালাক্সি তৈরি করেছিল। চৌহানের ঘন ঘন পার্টি-বদলের মূল্য দিতে হয়েছে বিজেপিকে। একইসঙ্গে তাঁর আক্রমণাত্মক প্রচারেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভোটাররা।
ঝাড়খণ্ডের ডুমরিতে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী হিসেবেই লড়েছিলেন ক্ষমতাসীন জেএমএমের বেবি দেবী। এনডিএ-র মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে জিতেছেন তিনি। উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর বিধানসভা আসনেও ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী ফাইট দিয়েছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এই কেন্দ্রটি বিজেপি ধরে রাখতে পেরেছে। কংগ্রেস এই কেন্দ্রে ২৪০০-এরও বেশি ভোটে হেরেছে।
তবে বিজেপি উল্লসিত ত্রিপুরার উপ নির্বাচনের ফলে। ধনপুর এবং বক্সানগর আসনে জোরালো জয় পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। বিজেপি বক্সানগরে সিপিএমকে ৩০,২০০-এর বেশি ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। এখানে বাম প্রার্থী প্রায় ৩,৯০০ ভোট পেয়েছিলেন। এই দুই জয় ৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভায় বিজেপির সংখ্যা ৩৩-এ নিয়ে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ধপগুড়ির আসনটি হারাতে হয়েছে গেরুয়া দলকে। চার হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী। এই জয় উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কংগ্রেসের সমপর্থন নিয়ে সিপিএম এবার ধূপগুড়িতে নতুন মুখকে টিকিট দিয়েছিল। বিজেপিও নিহত জওয়ানের স্ত্রীকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি বাম-বিজেপির। জোরালো জয় পেয়েছে তৃণমূল। ধূপগুড়ির এই জয় প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সাতটির মধ্যে চারটি উপনির্বাচনে বিজেপি হেরেছে। এটি ভারতের জন্য একটি বড় জয়।"
তবে উপনির্বাচনের সবচেয়ে চর্চিত ঘটনাটি ঘটেছে কেরলে। কংগ্রেস এখানে কেবলই পুথুপ্পল্লী আসনটি ধরে রাখেনি, এমনই একটি ব্যবধানে জয় এসেছে যা রেকর্ড তৈরি করেছে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডি ৫৩ বছর ধরে আসনটি ধরে রেখেছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে চন্ডি ওমেনকে এই কেন্দ্রে টিকিট দেয় কংগ্রেস। তিনিও বড় মার্জিনে হারিয়ে দেন সিপিএম প্রার্থীকে।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। এবারের উপনির্বাচনে সামনে থেকে প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজয়ন। রাজনৈতিক মহল বলছে, সিপিএমের আক্রমণাত্মক প্রচার এবং চান্ডি পরিবারের উপর তীক্ষ্ণ আক্রমণ ভালোভাবে নেননি ভোটাররা। প্রয়াত কংগ্রেস নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তাঁরা ঢেলে ভোট দিয়েছেন কংগ্রেসকে। সিপিএম প্রার্থী উপ নির্বাচনে চান্ডি ওমেনের প্রায় অর্ধেক ভোট পেয়েছেন।