দশেরার সমাবেশেও একনাথ শিণ্ডেকে ছাড়লেন না শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে। প্রাক্তন অটোচালক, পরবর্তী সময়ে তাঁর হাত ধরে শিবসেনায় উঠে আসা একনাথ শিণ্ডেই এখন মাতশ্রীর (ঠাকরের বাড়ি) সবচেয়ে বড় শত্রু। শিবাজি পার্কে দলের দশেরার সমাবেশে উদ্ধবের বক্তৃতায় তাই ঘুরেফিরে এল শিণ্ডের কথা। পিছন থেকে বিশ্বাসঘাতকের মত ছোরা মেরে মহারাষ্ট্রের কুর্সি তাঁর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন শিণ্ডে। ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন শিবসেনায় তাঁর উত্তরাধিকার। শিবাজি পার্কের নানা প্রান্তে লাগানো মাইকের চোঙে উদ্ধবের সেই সব অভিযোগই বুধবার ভেসে বেড়াল।
মুম্বইয়ের দাদারের ঐতিহাসিক শিবাজি পার্ক। যে পার্ক, ১৯৬৬-র বিজয়া দশমীতে জন্ম দেখেছিল শিবসেনার জন্মকালীন সমাবেশের। সেই ঐতিহ্যবাহী পার্কেই ২০২২-এর বিজয়া দশমীতে উদ্ধবের তিরে বিদ্ধ হলেন একনাথ শিণ্ডে। যাঁকে 'বিশ্বাসঘাতক' বলে চিহ্নিত করে বুধবার উদ্ধব টেনে আনেন ৫০ কোটি টাকা দিয়ে বিধায়ক কেনার অভিযোগ। দশেরার দিনে শিণ্ডেকে বসান রাবণের আসনে। উদ্ধব বলেন, 'এই বছরের রাবণ আলাদা। রাবণের ১০টি মাথা ছিল। কিন্তু, এই রাবণের আছে ৫০টি মাথা।'
উদ্ধবের এই সব অভিযোগ কানে পৌঁছতে দেরি হল না, বান্দ্রায় মাতশ্রীর কাছেই এমএমআরডিএর মাঠে। সেখানে তখন শিবসেনার পালটা গোষ্ঠীর সমাবেশ করে ভাষণ দিচ্ছেন শিণ্ডে। তিনি দাবি করলেন, তিনি যা করছেন, ঠিকই করছেন। উদ্ধব ঠাকরে বা নিজের নয়, তিনি চলেছেন বালাসাহেব ঠাকরের চিন্তাধারায়।
উদ্ধবের অভিযোগের জবাবে শিণ্ডের কথাতেও উঠে এল বিশ্বাসঘাতকতার প্রসঙ্গ। শিণ্ডে অভিযোগ করলেন, 'সত্যিকারের বিশ্বাসঘাতকতা যদি কিছু হয়ে থাকে, তবে সেটা হয়েছিল ২০১৯ সালে। কারণ, তখন শিবসেনা বালাসাহেব ঠাকরে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি পাশাপাশি ব্যানারে রেখেছিল। আর, মহারাষ্ট্রবাসীর কাছে ভোটভিক্ষা করেছিল। সেই সময় শিবসেনা দাবি করেছিল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে সরকার বানাবে। কিন্তু, শিবসেনা বিজেপিকে ছেড়ে, বালাসাহেবের আদর্শ পরিত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি আর কংগ্রেসের হাত ধরল।'
আরও পড়ুন- গুজরাটে গরবায় পাথর ছোড়ার অভিযোগ, ১০ মুসলিম যুবককে গ্রেফতারের পর প্রকাশ্যে লাঠিপেটা
উদ্ধবের শিবাজি পার্কের সভায় বুধবার লোক হয় কি না, সেটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, শিণ্ডে শিবিরের দাবি ছিল, উদ্ধব জনবিচ্ছিন্নহীন। একই অভিযোগ বারবার করেছেন শিণ্ডের অনুগামী বিধায়করাও। তারপরও শিবসেনার শিবাজি পার্কের সমাবেশে লোক আসা রুখতে মুম্বই পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। নয় দিনের নবরাত্রি উৎসবের সমাপ্তির আগে, মুম্বই ট্র্যাফিক পুলিশ একটি নির্দেশ জারি করেছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টে থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ট্র্যাফিক বিধিনিষেধ জারি রাখার কথা জানিয়েছিল। শহরে দেবী প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বড় মিছিল হতে পারে এমন কথাও জানিয়েছিল।
সেই বিধিনিষেধ অনুসারে, মুম্বই শহরের ২২টি রাস্তা যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৮টি রাস্তায় একমুখী ট্র্যাফিক চলাচলের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আর, ৪৫টি রাস্তায় পার্কিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, তারপরও শিবাজি পার্কের সভায় বুধবার ভিড় উপচে পড়েছে অন্যবারের মতই। আর, এতেই খুশি উদ্ধব শিবির।
Read full story in English