এনসিপি, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে শিবসেনা। কিন্তু, এখনও তাদের বিধায়ক 'কেনা-বেচার' আশঙ্কায় ভুগছে। বিজেপির বিরুদ্ধে 'ঘোড়া কেনা-বেচার' চেষ্টার অভিযোগ তুলে এদিন সরব হয়েছে সেনা শিবির। দলীয় মুখপত্র সামনায় লেখা হয়েছে, 'রাষ্ট্রপতি শাসনেও ঘোড়া কেনা-বেচার চেষ্টা করছে বিজেপি। রাজ্যপালকে আগে তারা জানিয়েছিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়ক তাদের নেই। তাই সরকার তারা গড়তে পারবে না। এখন বলছে তারা প্রয়োজনীয় বিদায়ক জোগাড় করতে পারবে। এটা কীভাবে সম্ভব? তাদের অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্য সবাই বুঝতে পেরেছে।'
Advertisment
এদিকে, অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া তৈরি। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, কংগ্রেস ও এনসিপি জোটের সরকার যে গঠন হচ্ছে গতকালই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন শরদ পাওয়ার। এবার নজরে সরকারের ক্ষমতা ভাগাভাগির সূত্র নির্ধারণ। আপাতত তিন দলের রাজ্য নেতৃত্ব লাগাতার আলোচনা চালাচ্ছেন এই সূত্রের সন্ধানে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রে মারফত জানতে পেরেছে, সেনা, কংগ্রেস ও এনসিপির রাজ্য নেতারাই প্রাথমিকভাবে এই সূত্র নির্ধারণের কাজ করবেন।
বৈঠকে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
আসন সংখ্যার নিরিখে মহারাষ্ট্র সর্বাধিক ৪২টি মন্ত্রীপদ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলি তিন দলের মধ্যে অনুপাতিক হারে ভাগ করা হবে। মূলত ৯টি দফতরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, রাজস্ব, সমবায়, পূর্ত, জল সম্পদ, নগরোন্নয়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষির মতো দফতরগুলি। সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে অনুপাতিক হারে দফতর বন্ঠন নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচন হয়েছে তিন দলের নেতাদের মধ্যে।
এই ফর্মুলায় ক্ষমতাভাগকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে কংগ্রেস। বৈঠকে দলের নেতারা এই ফর্মুলা লাগুর পক্ষেই সওয়াল করে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের যুক্তি, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তিন দলের কোনও পক্ষই এককভাবে যোগ্য নয়। 'ম্যাজিক ফিগারের' জন্য একে অপরকে প্রয়োজন প্রত্যেকটি দলেরই। এই ভাবনা বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ দফতর ভাগ করা হোক আনুপাতিক ভিত্তিতে। তবে, কে কোন দফতর পাবে তা এখনও আলোচনায় উঠে আসেনি।
মুখ্যমন্ত্রীত্ব আগামী পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদের জন্য পাবে উদ্ধব ঠাকরের দল। আপাতত, এই সিদ্ধান্তে সহমত কংগ্রেস ও এনসিপি। তবে পাওয়ারদের নজরে রয়েছে স্বরাষ্ট্র, সমবায় ও অর্থ দফতর। শিবসেনার তুলনায় মাত্র ২টি আসন কম পেয়েছে এনসিপি। জোট গঠনে তাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই মুখ্যমন্ত্রীত্ব না পেয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরেরর দখল পেতে মরিয়া এই দল।
জানা গিয়েছে, দফতরের বার্ষিক বাজেট বিবেচনা করে তিন দলের মধ্যে মন্ত্রীত্ব ভাগাভাগির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে, একটি দল স্বরাষ্ট্র দফতকর পেলে, অন্য দল পাবে রাজস্ব দফতর। জোট সরকার পরিচালনায় তৃতীয় দলের কাছে যাবে নগরোন্নয়ন দফতর। একইভাবে, বন্ঠন করা হবে, কৃষি, সমবায়, গ্রামীণ উন্নয়নের মতো দফতরগুলি।
মহারাষ্ট্রে ‘বিকল্প সরকার’ গড়তে বৃহস্পতিবারই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত করেছে তিন দলের রাজ্য নেতারা। পারস্পারিক ভেদাভেদ ভুলে বাস্তবতার ভিত্তিতে সরকার পরিচলনার ইস্যুগুলি সেখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গতকালই শরদ পাওয়ার বলেছেন, ‘এনসিপি, কংগ্রেস ও শিবসেনা মহারাষ্ট্রে আগামী সরকার গঠন করবে এবং তা পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবে।’
মহারাষ্টের সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আগামীকাল, রবিবার দিল্লিতে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার বৈঠক করবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর আগামী সপ্তাহেই রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের আবেদনন জানাতে পারে শিবসেনা, কংগ্রেস ও এনসিপি। এদিকে, আজ রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশিয়ারির কাছে যাচ্ছেন তিন দলের নেতৃত্ব। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অবিলম্বে সাহায্য়ে দেওয়ার দাবি জানানো হবে।
কবে হবে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন প্রক্রিয়া নাটকের ইতি? এনসসিপি নেতা নবাব মালিকের কথায়, 'আশা করছি আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।'