'দেশের মানুষকে স্পষ্টভাবে বলুন আপনি কী চান', মোদীকে কটাক্ষ শিবসেনার

শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'র একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের "ভুল অর্থ করেছেন" মানুষ, অতএব প্রধানমন্ত্রীর উচিত স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া

শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'র একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের "ভুল অর্থ করেছেন" মানুষ, অতএব প্রধানমন্ত্রীর উচিত স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে, ফাইল ছবি

মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়াতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রচ্ছন্নভাবে ব্যঙ্গা করে আক্রমণে নামল রাজ্যের শাসকদল শিবসেনা। বক্তব্য, COVID-19 এর বিরুদ্ধে লড়াইটা হাততালি দিয়ে, থালা-বাসন বাজিয়ে, বা প্রদীপ জ্বালিয়ে জেতা যাবে না।

Advertisment

শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'র একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের "ভুল অর্থ করেছেন" মানুষ, অতএব প্রধানমন্ত্রীর উচিত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া যে একজন নাগরিকের কাছ থেকে কী প্রত্যাশিত, এবং নির্দেশ না মানলে তার শাস্তি হবে।

Advertisment

গত রবিবার রাত নটার সময় ন'মিনিটের জন্য 'লাইটস অফ' হয়ে যায় ভারতের নানা জায়গায়, যেমন আবেদন জানিয়েছিলেন মোদী। উদ্দেশ্য, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের ''সামগ্রিক সঙ্কল্পের" প্রদর্শন। আবেদনে সাড়া দিয়ে অতি উৎসাহী অনেকেই শুধু বাড়ির আলোই নেভান নি, বারান্দায় প্রদীপ এবং মোমবাতি জ্বালিয়েছেন, শাঁখ বাজিয়েছেন, মোমবাতি বা মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ছাদে জড়ো হয়েছেন, মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেছেন, এমনকি পটকাও ফাটিয়েছেন দেদার।

এর আগে ২২ মার্চ মোদী দেশবাসীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন যেন সকলে 'জনতা কার্ফু' পালন করেন এবং বিকেলে নিজেদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে বা থালা-বাসন বাজিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

"হাততালি, থালা এবং আলো... এভাবে তো যুদ্ধ হেরে যাব আমরা। মানুষ যেভাবে এইসব আবেদনে সাড়া দিয়েছেন, তার অনেকগুলো দিক আছে। দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের ভুল অর্থ করছেন...হয় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঠিক ভাবে বোঝাতে পারছেন না, নাহয় তিনিই চান এই উৎসবের আবহ," বলছে শিবসেনা।

অন্যদিকে, সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যবাসীকে উৎসাহ দিচ্ছেন আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে, এবং কোনোরকম বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন। "করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজন এমনই একজন সেনাপতির। আমরা (মারাঠারা) পানিপতের যুদ্ধেও হেরে গিয়েছিলাম গুজব রটার ফলে, এবং পরিকল্পনার অভাবের ফলে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেন সেই দশা না হয়, এবং রাজ্যবাসীর অবস্থা যেন সদাশিব রাও ভাউয়ের (পানিপতের যুদ্ধে মারাঠাদের সেনাপতি) মতো না হয়।

সম্পাদকীয়র বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিন, মানুষকে বোঝান কী করতে হবে। "যাঁরা নির্দেশ মানবেন না তাঁদের শাস্তি হবে। শুধুমাত্র মরকজ (নয়া দিল্লিতে গতমাসের তবলিগি জামাতের সমাবেশ) নিয়ম ভেঙেছে, এমন তো নয়। যাঁরা মরকজকে দোষ দিচ্ছেন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে, তাঁরা নিজেরা কি সামাজিক দূরত্বের সবরকম নিয়ম পালন করছেন?"

প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের ফলে মানুষজন যে হাতে মোমবাতি, টর্চ, বা মোবাইল নিয়ে রাস্তায় নেমে এসে নাচানাচি পর্যন্ত করেন, এর নিন্দা করে শিবসেনা বলেছে, বাজি পোড়ানোর ফলে শোলাপুরে একটি অগ্নিকান্ডও ঘটেছে।

মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা জেলার বিজেপি বিধায়ক দাদারাও কেচের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ২০০ মানুষের জমায়েত হওয়ার ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জায়গায় আরও কিছু ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন উত্তরপ্রদেশের বলরামপুরে এক বিজেপি মহিলা শাখার নেত্রীর বাতাসে গুলি ছোড়া, যাতে করোনাভাইরাস 'তাড়িয়ে দেওয়া যায়'।

প্রসঙ্গত, আজ, বুধবার, মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১,০৭৮, মৃতের সংখ্যা ৬৪। সারা ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫,১৪৯, যাঁদের মধ্যে ৪০১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মৃতের সংখ্যা ১৪৯। গত ১২ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের, যা এখন পর্যন্ত এই সময়কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।