মানতে হবে ৫০-৫০ ফর্মুলা। না হলেই 'বিকল্পের' হুমকি। মুখপত্র 'সামনা'তে বলা হয়েছে তারাই রাজ্যের সরকার গঠনের রিমোট কন্ট্রোল। শরিক বিজেপির উপর আপাতত এই কৌশলেই চাপ বাড়াচ্ছে শিবসেনা। কিন্তু, সেই চাপের কাছে কোনওভাবেই মাথা নত করতে রাজি নন অমিত শাহ, দেবেন্দ্র ফড়নবিশরা। উল্টে, শরিক দলকে দেওয়া আগের প্রস্তাবেই অনড় বিজেপি। আসন সংখ্যার নিরিখে শিবসেনা মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদটি পেতে পারেন বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে পদ্ম শিবির।
বিজেপি সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে দল শিবসেনাকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদটি ছেড়ে দিতে রাজি আছে। কিন্তু, ৫০-৫০ ফর্মুলায় মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিতে শরিক দল অনড় থাকলে বিজেপিও নিজেদের অবস্থান বজায় রাখবে। ফলে বলাই যায়, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে এনডিএ-এর দুই শরিকের দ্বন্দ্ব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের এক পদাধিকারী জানান, ‘কোন দল কটা আসন পেয়েছে তার উপর নির্ভর করেই স্থির হয় সরকারে অংশীদারিত্ব। ফলে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেডে় দেওয়ার কোনও কারণই থাকতে পারে না।’
আরও পড়ুন: হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন খট্টর, সহকারী দুষ্যন্ত চৌতালা
শনিবার সন্ধ্যায় শিবসেনা তাদের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করে। সেখানেই ৫০-৫০ ফর্মুলায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে অনড় ছিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। দাবি না মানা হলে সংঘাতের আবহ জোড়াল হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে মহারাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক দলটিও। তবে, সরকার গঠন নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দরকষাকষি করতে সোমবারের পর আলোচনায় বসতে পারে উদ্ধব ঠাকরেরা।
বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা তরজা অব্যাহত। শনিবার শিবসেনা বিধায়কদের বৈঠকেও কাটল না জট। গতকাল উদ্ধব ঠাকরে নিজের বাসভবন ‘মাতশ্রী’তে বিধায়কদের জরুরি তলব করেছিলেন। সেখানেই ঠিক হয় রাজ্যের ৫০-৫০ ফর্মুলায় মুখ্যমন্ত্রী পদ আড়ই বছর করে ভাগ করে নেবে বিজেপি ও সেনা।
উপ-মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না উদ্ধব ঠাকরেরা। শিবসেনা বিধায়ক প্রতাপ সারনায়েক স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমরা উপ-মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে ভাবছি না। ওই পদ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা ৫০-৫০ ফর্মুলায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি করছি।’ ইতিমধ্যেই সেনা বিধায়করা একটি রেজলিউশনও পাস করিয়েছেন। যেখানে বলা হয়েছে, বিজেপির সঙ্গে সম্পূর্ণ দরকষাকষির বিষয়টি স্থির করবেন দলের প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। সরকার গঠনের বিষয়টি কৌশলে আপাতত মোদী-শাহ জুটির উপরই ছেড়ে দিয়েছে সেনা শিবির।
গেরুয়া শিবির দাবি না মানলে বিকল্প পথের ইঙ্গিত দিয়েছেন শিবসেনা বিধায়ক প্রতাপ সারনায়েক। তবে সেটা কি? তা খোলসা করতে চাননি। শিবসেননার হাতে রয়েছে ৫৬ বিধায়ক। সেক্ষেত্রে সরকার গড়ার জন্য এনসিপি’র সঙ্গে জোট বাঁধতে পারেন তারা উদ্ধব ঠাকরেরা।
আরও পড়ুন: অষ্টম শ্রেণি থেকেই উপার্জনের চিন্তা করো, শিক্ষার্থীদের উপদেশ বিপ্লব দেবের
তবে, বিজেপি একান্ত রাজি না কিছুটা নরম হতে পারে সেনা শিবির। রাজ্যের এক প্রাক্তন শিবসেনা মন্ত্রীর কথাতেই তা স্পষ্ট। তাঁর কথায়,'বিজেপি ৫০-৫০ ফর্মুলায় মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবি না মানলে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলি যাতে আমাদের হাতে আসে তা দেখতে হবে।' মুখে আদিত্য ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রীর করার কথা বললেও সেনা শিবিরের অন্দরেই তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দলের বহু প্রবীণ নেতার কথায় তা প্রকাশ পেয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে জোট বেঁধে লড়াই করেছে বিজেপি-শিবসেনা। স্বভাবতাই ১৫০ আসনে লড়ে ১০৫টি আসন পেয়েছে বিজেপি। শিবসেনার দখলে ৫৬ আসন সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৪৫। ফলে জোট ছাড়া কোনওভাবেই সরকার গড়তে পারবে না বিজেপি। আর সেই সেই সুযোগটাই ভোটের পর কাজে লাগাতে মরিয়া শিবসেনা।
Read the full story in English