ইসলামপুরে ছাত্র বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ ও ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে বামেদের মিছিলে পুলিশকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগে দুই বাম নেতাকে আটক করল পুলিশ। ধৃতরা হল পার্থ মৈত্র এবং সুব্রত চক্রবর্তী। সোমবার রাতে শিলিগুড়িতে সিপিএমের পার্টি অফিস অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে থেকে ওই দুজনকে আটক করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে খুনের চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করার কথা বিবেচনা করছে পুলিশ। দুই বাম নেতাকে আটক করার পরেই থানায় যান শিলিগুড়ির সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য, বামফ্রন্টের দার্জিলিং জেলার আহ্বায়ক জীবেশ সরকার সহ বাম নেতৃত্ব। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন।
ইসলামপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার শিলিগুড়িতে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি মিছিল ডাকা হয়। বিকেল ৫টা নাগাদ মিছিলটি অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে হাসমিচক হয়ে ফের অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করার চেষ্টা করেন সিপিএম নেতারা। এরপর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় তাদের। পুলিশ সিপিএম নেতাদের কুশপুতুল দাহ করতে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাম নেতৃত্ব। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।
শিলিগুড়িতে পুলিশের গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ সিপিএমের বিরুদ্ধে। pic.twitter.com/jsqYWoqnXj
— IE Bangla (@ieBangla) September 25, 2018
অভিযোগ, এই সময়ে কয়েকজন নেতা শিলিগুড়ি থানার আইসি দেবাশিস বসু খালপাড়া ফাঁড়ি ওসি সুবল ঘোষ এবং পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির ওসি সমীর তামাংয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে তাঁদের জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। চোখের মধ্যে কেরোসিন চলে যাওয়ায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মাটিতে বসে পড়েন দেবাশিস বসু। এরপর ওই পুলিশকর্মীদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার অচিন্ত্য গুপ্তর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান নেতারা। আইসি এবং দুই ওসিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে পুলিশ। পুলিশ থাকায় পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় বেশ কয়েকজন। রাত সাড়ে নটা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন পার্থ মৈত্র এবং সুবীর চক্রবর্তী। তাঁদের দেখা মাত্র আটক করে পুলিশ। এরপরই থানায় ভিড় জমাতে থাকেন সিপিএম নেতারা।
খবর পেয়ে থানায় পৌঁছান শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। থানার আইসির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করছিলাম। সাদা পোশাকের পুলিশ আমাদের মিছিলে ঢুকে গিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তারা আমাদের মহিলা কর্মীদের গায়ে হাত দেয়। পুলিশকে আমরা কিছুই করিনি বা তাদের গায়ে কেরোসিন দিইনি। অন্যায় ভাবে পুলিশ আমাদের কর্মীদের আটক করেছে। তার প্রতিবাদে শহর জুড়ে বিক্ষোভ হবে। আরো বড় মিছিল বের হবে। শহর স্তব্ধ হয়ে যাবে।"
বামফ্রন্টের দার্জিলিং জেলার আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, "পুলিশ গণতন্ত্র হত্যা করতে চাইছে। রাজ্য সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে অশান্তি তৈরি করেছে। প্রয়োজনে আদালতে যাবো।"
পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন," সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী এখনো শোধরায়নি। পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে এটা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। পুলিশকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছি।"