'দেশ বাঁচানোর সময় এসেছে। আমাদের কঠিন সংগ্রাম করতে হবে।' ভারত বাঁচাও সমাবেশে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে এই মন্তব্য করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। গত অগাস্টেই দলের হাল ধরেছেন সোনিয়া। তার প্রায় চার মাস পর প্রকাশ্যমঞ্চে বক্তব্য রাখলেন তিনি। ৩৭০ ধারা বিলোপ থেকে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায় সরব হলেন রাজীব জায়া।
এদিন সোনিয়া গান্ধী বলেন, 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতের আত্মীকে টুকরো টুকরো করবে। ঠিক যেমন ঘটছে আসাম ও উত্তর পূর্বে। কেন্দ্রীয় সরকার যে নাগরিকত্ব সশোধনী আইন এনেছে তা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। তবে, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, যাদের উপর অন্যায় হবে তাদের পাশে থাকবে কংগ্রেস।'
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব বিলের মূল্য দিতে পারবে তো ভারতবর্ষ?
মোদী সরকারের ভুল নীতির কারণেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবস্থা বেহাল বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর কথায়, 'কালো টাকা ফেরাতে বিমুদ্রাকরণ করল সরকার। অর্থনীতি বেহাল হয়ে পড়েছে এর ফলে। বিমুদ্রাকরণের ফলে অনেক ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করতে বাদ্য হয়েছেন। কিন্তু সরকারের প্রতিশ্রুতি মত কেন কালো টাকা ফিরে এল না ততা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।' তাঁর অভিযোগ, এনম এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে, শাসক দলের মনে হলেই সংবিধানের কোনও দারা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরি হচ্ছে। বিতর্ক এড়াতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে আইন জারি হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে সংবিধান লংঘন করা হচ্ছে, আবার একই সঙ্গে সংবিধান দিবস পালন করা হচ্ছে।
সোনিয়া গান্ধীর পাশাপাশি এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধী। "রেপ ইন ইন্ডিয়া" মন্তব্যে যতই বিতর্কের ঝড় উঠুক না কেন, এই কথার জন্যে ক্ষমা চাইবেন না তিনি, ফের একবার জোর গলায় বললেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর কথায়, 'গতকাল (শুক্রবার) আমাকে সংসদে বলা হয় যে আমি একটি সমাবেশে যা বলেছিলাম তার জন্য আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু, আমি সত্যি কথাই বলেছিলাম এবং তাঁর জন্যেই আমাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়।'
আরও পড়ুন: ‘বৈষম্যমূলক’, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া রাষ্ট্রসংঘের
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল বলেন, 'আমার নাম, রাহুল সাভারকর নয় যে ক্ষমা চাইতে হবে। ভারতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য প্রদানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীকে ক্ষমা চাইতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেশের শত্রু বলেও তোপ দাগেন রাজীব পুত্র। ধর্মীয় মেরুকরণের স্বার্থে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। রাহুল গান্ধী বলেন, 'সবাই জানে আজ দেশের কী অবস্থা। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগির উদ্দেশ্যে জম্মু-কাশ্মীর ও নাগরিকত্ব আইন হল। আসাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরায় গেলেই দেখা যাবে সেখানকার অবস্থা। পুরো অঞ্চলকে উত্তপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।' বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে মোদী সরকারের বিজ্ঞাপনের অর্থ কোথা থেকে আসে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাহুল গান্ধী। পরে জানিয়ে দেন, জণগনের কঠোর পরিশ্রমের অর্থ উন্নয়নের কাজে না লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রচারের কাজে লাগান।
এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদিকা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের সবাইকে এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই। যদি আমরা তা না করি তবে সেই সময় খুব বেশি দূরে নয় যখন এই সরকার দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করে দেবে।' অর্থনীতিক অবস্থাকে তোপ দেগে তিনি বলেন, 'বিজেপি সরকারের ছয় বছরের সরকারের পরেও কর্মসংস্থানের পরিবর্তে চাকরি হারাতে হচ্ছে। জিএসটির কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে।'
Read the full story in English