গত ১৬ জুন উত্তরবঙ্গকে পৃথক জেলার দাবি তুলেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। যাকে কেন্দ্র করে রাজ্যরাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। পরে সাংসদের সেই দাবিকে সমর্থন করতে দেখা যায় একাধিক গেরুয়া বিধায়ককে। প্রকাশ্যেই রাজ্যভাগের পক্ষে সেওয়াল করেছিলেন উত্তরবঙ্গের দুই বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় ও আনন্দময় বর্মন। এবার সেই তালিকায় যোগ হল উত্তরবঙ্গেরই আরেক বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মন। বঞ্চনার তত্ত্ব খাড়া করেই উত্তরবঙ্গকে নিয়ে পৃথক রাজ্যের মর্যাদার দাবি করেছেন শীতলকুচির বিধায়ক। তবে, দলীয় বিধায়কের দাবি খারিজ করেছেন বিজেপিরই কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে।
বাংলা ভাগের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতির পারদ চড়েছে। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরকে কড়া নিশানা করেছে তৃণমূল। দলীয় সাসংদ, বিধায়কদের দাবি নিয়ে বিজেপির অন্দরেও মিলেছে মতবিরোধের ইঙ্গিত। যা এদিন ফের স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে দলকে আলাদা করতে নানান যুক্তির জাল বিস্তার করেছে পদ্ম বাহিনী। খোদ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "বিজেপি অখণ্ড বাংলার উন্নয়নের পক্ষে। পৃথক রাজ্য বিজেপির দাবি নয়।" তবে, উত্তরবঙ্গ যে স্বাধীনতার পর থেকে বিশেষ করে বামং ও তৃণমূলের গত ১০ বছরের শাসনকালে অবহেলিত তা তুলে ধরতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। পৃথক রাজ্যের দাবি লঘু করতে তাই বঞ্চনার তত্ত্বেই শান দিয়েছেন একাধিক শীর্ষ পদ্ম নেতা। খোদ দিলীপ ঘোষের কথায়, "উত্তরবঙ্গ দীর্ঘ দিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। তাই হতাশ মানুষ। উত্তরবঙ্গবাসীরই দীর্ঘ দিনের দাবি পৃথক রাজ্য গঠন। যা জনপ্রতিনিধিরা তুলে ধরছেন। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।"
কী বলেছেন বরেনচন্দ্র বর্মন?
বিজেপি দলীয়ভাবে পৃথক রাজ্যের দাবি খথেকে যতই নিজেদের সরিয়ে রাখতে তৎপর হোকনা কেন, আদলে বারে বারেই এই ইস্যু বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসছে। এবার উত্তরবঙ্গকে নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছেন শীতলকুচির বিজেপি সাংসদ বরেন্দ্রচন্দ্র বর্মন। নিজের দাবি তুলে ধরতে গিয়ে বিজেপি বিধায়ক বলেছেন, "দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গের মানুষ বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, শোষিত। কোনও উন্নতিই এখানে হয়নি। এইমসের মতোভালো কোনও হাসপাতাল নেই, নেই ভালো কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই পৃথক রাজ্য এখানকার মানুষের বহু দিনের দাবি। আমরা মানুষের দাবিকে সমর্থন করি।"
যদিও দলেরই বিধায়কের পৃথক রাজ্যের দাবি উড়িয়েছে কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে। তাঁর দাবি, "বিজেপি উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য হিসেবে দেখতে চায় না, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল রাজ্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি। যদি কেউ এই ধরনের কথা বলে তাঁকে আমরা সমর্থন করি না।"
গোটা ঘটনায় এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেছেন, "উপর মহল বলছে বাংলা ভাগ হোক তাঁরা চান না। এদিকে বিধায়কের গলায় অন্য সুর। উত্তরবঙ্গ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুক বিজেপি, না হলে যাঁরা এই ধরনের কথা বলছে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুক দল।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন