রাজস্থানে রাষ্ট্রীয় রাজপুত করনি সেনার সভাপতি সুখদেব সিং গোগামেডিকে তার বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে হত্যা করেছে। জয়পুরে রাষ্ট্রীয় রাজপুত করনি সেনার জাতীয় সভাপতি সুখদেব সিং গোগামেডির মৃত্যুর নিন্দা জানিয়ে বিজেপি নেতা রাজেন্দ্র রাঠোর বলেছেন এই ঘটনা 'দুর্ভাগ্যজনক'।
রাজ্যের বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান সরকারের সমালোচনা করে রাঠোর বলেছিলেন যে ঘটনাটি রাজস্থানের বিদায়ী সরকারের জন্য একটি 'দাগ টেনে দিয়ে গিয়েছে' । তিনি আরও বলেন, 'একজন জাতীয় স্তরের সমাজকর্মী, যিনি পুলিশের কাছে সুরক্ষা চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। তাঁর বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে তাকে হত্যা করে…এটি রাজস্থানের বিদায়ী সরকারের উপর একটা দাগ টেনে দিয়ে গিয়েছে"।
এই হত্যা মামলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাঠোর বলেছিলেন যে সরকারকে এই মামলায় দ্রুত পদক্ষেপগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এই মামলার তদন্তে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা উচিত। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত"। এদিকে হত্যার ঘটনায় রাজপুত সম্প্রদায়ের সংগঠন জয়পুরে একটি ধর্নার আয়োজন করেছে। কর্নি সেনার সভাপতিকে হত্যার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বন্ধের ডাক দিয়েছে।
জয়পুরের হাওয়া মহলের নব নির্বাচিত বিধায়ক এবং বিজেপি নেতা বালমুকুন্দ আচার্য ঘটনার জন্য বিদায়ী অশোক গেহলট সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, "অশোক গেহলট এই ঘটনার জন্য দায়ী। এই সরকারের অধীনে রাজ্যে 'মাফিয়া রাজ' বেড়েই চলেছে"। সুখদেব সিং গোগামেডির মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক জল ঘোলা হতে শুরু করেছে।
কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেছেন, বিজেপি সরকারের শুরুর এই দৃশ্য দুর্ভাগ্যজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। তবে এটি যদি বিজেপি সরকারের শুরুর নিদর্শন হয় তবে এর পরে কী হবে?…" ।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেছেন যে সুখদেব সিং গোগামেডির হত্যার ঘটনা খুবই দুঃখজনক৷ রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে বলেছেন যে ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক।" শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করনি সেনার জাতীয় সভাপতি শ্রী সুখদেব সিং গোগামেডির হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক। গ্যাংস্টার রোহিত গোদারা একটি ফেসবুক পোস্টে গোগামেডির হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এদিকে ঘটনা প্রসঙ্গে রাজস্থানের ডিজিপি উমেশ মিশ্র বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হবে। দুষ্কৃতী সম্ভাব্য সকল আস্তানায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
২০০০ মাঝামাঝি পর্যন্ত তার উত্থান সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। গোগামেডি সক্রিয়ভাবে রাজপুত সম্প্রদায়ের প্রচারাভিযানে অংশ নেন এবং এমনকি তাদের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। তিনি মহারানা প্রতাপকে তাঁর আইকন হিসাবে বিবেচনা করতেন এবং প্রায়শই তাঁর উদ্ধৃতির উল্লেখ করতেন । ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএসপির টিকিটে তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। মোট ভোটের প্রায় ১৮ শতাংশ পেয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন তিনি। পরবর্তীকালে, গোগামেডিকে লোকেন্দ্র কালভির নেতৃত্বাধীন শ্রী রাজপুত কালভি সেনা (SRKS) এর প্রধান করা হয় কিন্তু উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে, কালভি তাকে বহিষ্কার করেন।
গোগামেডি এরপর SRRKS গঠন করেছিলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জয়পুরের জয়গড় ফোর্টে পদ্মাবতের শুটিং চলাকালীন চলচ্চিত্র নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বনসালিকে চড় মারার পিছনে সংগঠনের হাত ছিল। SRRKS বানসালির বিরুদ্ধে চলচিত্রে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ আনে। এই বছরের এপ্রিলে, SRRKS জয়পুরে একটি কেসারিয়া মহাপঞ্চায়েতেরও আয়োজন করেছিল এবং সাধারণ জাতিগুলির জন্য অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ক্যাটাগরির (EWS) সংরক্ষণ ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৪ শতাংশের দাবি জানিয়েছিল।
গোগামেডি সদ্যসমাপ্ত রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভাদ্র থেকে কংগ্রেসের হয়ে টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের তরফে তার সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। 'এক্স'-এ তার শেষ পোস্টে, তিনি বলেছিলেন "ভুল টিকিট বন্টন" এবং কর্নি সেনাকে "উপেক্ষা" করার কারণে কংগ্রেস রাজস্থানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে, গোগামেডিও হত্যা, ধর্ষণ সহ বেশ কয়েকটি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।
এদিকে তার মৃত্যুর ঘটনায় স্ত্রী শীলা অবশ্য বলেন, “আমাকে (বিয়ের আগে) বলা হয়েছিল যে তার ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ছিল না। কিন্তু আমি শুধু তাকে লোকের ভালো করতে দেখেছি। তিনি গরিবদের মাথায় ছাদ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। গরিব মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলেন। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তিনি সব কিছু করেছেন আমি তাকে নিয়ে গর্বিত।” শীলাও SRRKS-এ যোগ দিয়েছিলেন এবং এর মহিলা শাখার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।