"ঋতুস্রাবের রক্তে ভেজা স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কি আপনি বন্ধুর বাড়িতে যান? তাহলে, দেবালয়েই বা যাবেন কেন? এটা স্বাভাবিক বুদ্ধি..." শবরীমালা বিতর্কে এমন মন্তব্যই করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানি। মঙ্গলবার মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে শবরীমালা সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের মন্ত্রী হিসাবে তাঁর মন্তব্য করা উচিত নয় বলেও স্মৃতি বলেন, "প্রার্থনার অধিকার প্রত্যেকের আছে, কিন্তু অসম্মানের অধিকার কারও নেই"।
স্মৃতি ইরানির 'রক্তে ভেজা স্যানিটারি ন্যাপকিনে'র উপমা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে হইচই শুরু হয়েছে। আর এরপর নিজের 'মন্তব্যের উপর মন্তব্য' করতে টুইটারকেই বেছে নিয়েছেন স্মৃতি। তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জল ঘোলা করা হচ্ছে দাবি করে স্মৃতি দুটি 'তথ্য তুলে ধরে' লিখেছেন, "ধর্মাচারি হিন্দু হয়েও আমি এক জরাথ্রুষ্টিয়কে বিয়ে করেছি। আর তাই আমি ফায়ার টেম্পলে প্রবেশ করতে পারি না।" স্মৃতি আরও জানিয়েছেন, তিনি বরং জরাথ্রুষ্টিয় সম্প্রদায়কে শ্রদ্ধা করেন এবং দুই জরাথ্রুষ্টিয় শিশুর মা হওয়া সত্বেও তিনি ওই মন্দিরে প্রার্থনার অধিকার চাইতে আদালতের দ্বারস্থ হবেন না। একইভাবে পার্শি বা অপার্শিদের মধ্যেও ঋতুমতী মহিলাদের ফায়ার টেম্পলে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এরপরই সমালোচকদের বিঁধে এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লিখেছেন, "এতেই আমার মজা হয় তবে অবাক হই না যখন দেখি আমি আমার স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারছি না। যতক্ষণ আমি উদার মনস্ক কথা না বলছি, ততক্ষণ আমি গ্রহণযোগ্য, আর না বললেই ব্যাস। এ কেমন ঔদার্য!" তবে স্মৃতি ইরানি এতসব লেখার পরও তাঁকে টুইটারে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকেই তাঁর এই 'জবাবদিহি'র কারণ জানতে চেয়েছেন।
Since many people are talking about my comments — let me comment on my comment.
As a practising Hindu married to a practising Zoroastrian I am not allowed to enter a fire temple to pray.
— Smriti Z Irani (@smritiirani) October 23, 2018
I respect that stand by the Zoroastrian community / priests and do not approach any court for a right to pray as a mother of 2 Zoroastrian children. Similarly Parsi or non Parsi menstruating women irrespective of age DO NOT go to a Fire Temple.
— Smriti Z Irani (@smritiirani) October 23, 2018
These are 2 factual statements. Rest of the propaganda / agenda being launched using me as bait is well just that ... bait.
— Smriti Z Irani (@smritiirani) October 23, 2018
But what fascinates me though does not surprise me is that as a woman I am not free to have my own point of view. As long as I conform to the ‘liberal’ point of view I’m acceptable. How Liberal is that ??
— Smriti Z Irani (@smritiirani) October 23, 2018
প্রসঙ্গত, শতাব্দী প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, কেরালার পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। এই বয়সের মহিলারা 'ঋতুযোগ্য' অর্থাৎ 'অপবিত্র' এবং তাঁরা প্রবেশ করলে 'চির ব্রহ্মচারী' আয়াপ্পার মন্দিরের 'পবিত্রতা' বিনষ্ট হবে বলেই যেতে দেওয়া হত না। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই রীতি খারিজ করে সব বয়সের মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আয়াপ্পা ভক্তকুলের একাংশ সুপ্রিম রায়কে কোনওভাবেই বাস্তবায়িত হতে দেবে না বলে অনড় ছিল এবং এ যাত্রায় শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। সুপ্রিম রায়ের পর ১৭ অক্টোবর শবরীমালা মন্দির খোলে এবং ২২ অক্টোবর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের একজনকেও মন্দিরে ঢুকতে দেয়নি প্রতিবাদী ভক্তরা। উল্লেখ্য, প্রায় ১০ মহিলাকে মন্দিরের কাছ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেরল জুড়ে এই প্রতিবাদ হিংসাশ্রয়ী রূপ নিয়েছিল।
আরও পড়ুন- সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বদলাল না কিছুই, বন্ধ হল শবরীমালা মন্দির
সুপ্রিম কোর্টের শবরীমালা রায়ের প্রেক্ষিতে মিশ্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিজেপি এবং কেরালা কংগ্রেস এই রায়ের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে, কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকার প্রথম থেকেই সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল। তবে ১০-৫০ বছরের একজন মহিলাও প্রতিবাদীদের টপকে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি।
এদিকে, শবরীমালা রায় নিয়ে জমা পড়া আবেদন ১৩ নভেম্বর শোনা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্যদিকে শবরীমালা মন্দির কর্তৃপক্ষ সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, কোনও রীতি ভাঙা হলে তারা মন্দির মন্দির বন্ধ করে দেবে। পাশাপাশি, মন্দিরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া 'গুরুতর পরিস্থিতি'র বিষয়ে দেশের শীর্ষ আদালতকে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে দ্য ট্রাভাঙ্কোর দেবাসম বোর্ড।
আরও পড়ুন- শবরীমালা থেকে ফিরতে পারব কি না সুনিশ্চিত হতে না পারায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়েছিলাম: রেহানা ফতিমা
উল্লেখ্য, ৫ নভেম্বর এক দিনের জন্য শবরীমালা মন্দির খোলা হবে এবং এরপর ১৬ নবেম্বর থেকে ১২ দিনের জন্য খোলা থাকবে মন্দির।
Read this story in English