২৮ মে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন হওয়ার কথা। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিকে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আসরে নেমেছে বিরোধী দলগুলি।
বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। অনগ্রসর, দুর্বল ও দলিত সম্প্রদায়ের থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন স্রেফ নির্বাচনী চমক। প্রধানমন্ত্রীর নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি-আরএসএস সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদটি নিছক আনুষ্ঠানিকতায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী ২৮ শে মে নরেন্দ্র মোদী আগামী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন। এই অনুষ্ঠানে টিএমসি, এএপি, সিপিআই(এম) এবং সিপিআই সহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবারের এমন ইঙ্গিতের মধ্যে কংগ্রেস সহ আরও বেশ কয়েকটি বিরোধী দলগুলি অনুষ্ঠান বয়কট করবে বলে জানা গিয়েছে। ১৯টি বিরোধী দল ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উক্ত অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছে। একই সঙ্গে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছে ৩টি বিরোধী দল। একই সঙ্গে অন্য বিরোধী দলগুলির কাছে তাদের আবেদন সেদিনের অনুষ্ঠান যাতে বয়কট না করা হয়।
বিরোধী দলগুলির তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছ প্রধানমন্ত্রী মোদীর নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করবেন যা সংবিধানের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অপমান। সমগ্র দলিত পিছিয়ে পড়া শ্রেনীর মানুষের অপমান। তিনটি বিরোধী দল বিজু জনতা দল (বিজেডি), ওয়াইএসআরসিপি এবং শিরোমনি আকালি দল নতুন সংসদ ভবন কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে। তিনটি দলই স্পষ্টভাবে বলেছে যে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান এবং এখানে রাজনীতি ও বিরোধী মতের কোন স্থান নেই।
BJD-এর জাতীয় মুখপাত্র সস্মিত পাত্র একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে নতুন সংসদ ভবন ১৪০ কোটি দেশবাসীকে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছে। তিনি বলেছেন যে যে বিষয়গুলি উত্থাপিত হচ্ছে তা হাউসের মধ্যেও আলোচনা করা যেতে পারে। সস্মিত পাত্র বলেছেন যে এমন পরিস্থিতিতে বিজেডি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।
একই সময়ে, ওয়াইএসআরসিপি প্রধান এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডিও একটি বিবৃতি জারি করে সকল বিরোধী দলকে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে উপস্থিত থাকার আবেদন করেছেন। জগনমোহন রেড্ডি বলেন, এই পবিত্র অনুষ্ঠানটি বয়কট করা গণতন্ত্রের স্বার্থে নয়। তিনি আরও বলেছেন যে ওয়াইএসআরসিপি নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে অংশ নেবে।
শিরোমণি আকালি দল, যেটি আগে এনডিএ-র একটি অংশ ছিল এবং এখন বিরোধী দলে বসেছে, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনেও তাদের অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে। অকালি দলের তরফে জানানো হয়েছে, দলের সভাপতি সুখবীর সিং বাদল এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এর আগে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন বয়কট করার জন্য বিরোধী দলগুলির কঠোর সমালোচনা করে একটি বিবৃতি জারি করেছে। এনডিএ বিবৃতিতে বলেছে যে কীভাবে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এর আগে সংসদ এবং রাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছিল।
সব মিলিয়ে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজনীতি। দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এখন সকলের চোখ বিজেপি এবং বিরোধী শিবিরের দিকে।
নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক লড়াই চরমে পৌঁছেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় মো্দী সরকারকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সরকার দলিত ও আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুকে বসিয়েছেন তা স্রেফ এক নির্বাচনী চমক। খাড়গে অভিযোগ করেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ব্রাত্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
খাড়গে আরও বলেন, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁকে সংসদ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানো টা অসম্মানের। খড়গের আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও নতুন সংসদ ভবন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেছিলেন।একটি টুইট বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন ‘রাষ্ট্রপতির উচিত নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা’। মোদী সরকার ক্রমাগত আইন শৃঙ্খলা, সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করেছে।
তাঁর অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদটি নিছক আনুষ্ঠানিকতায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধী এর আগে বলেছিলেন যে রাষ্ট্রপতির উচিত নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা, প্রধানমন্ত্রীর নয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন।