Somnath Chatterjee dies: সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবসান। দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার। সোমবার সকাল ৮টা ১৫ নাগাদ তিনি মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। গত বৃহস্পতিবার কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। একদা সিপিআইএমের এই বর্ষীয়ান নেতা ডায়ালিসিসেও ভালই সাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু রবিবার সকালে আবারও হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। কোনওক্রমে তৎক্ষনাৎ তা সামলানো গেলেও শেষরক্ষা হল না। জুন মাসে হেমোরেজিক স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে শরীর জবাব দিতে থাকে এই বামপন্থী নেতার। ২০১৪ সালে মাইল্ড সেরিব্রাল স্ট্রোকও হয়েছিল তাঁর।
আজ দুপুর বারোটার পর হাসপাতাল থেকে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর প্রথম কর্মস্থল কলকাতা হাই কোর্টে, যেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান হাইকোর্টের বিচারপতি এবং অন্যান্য কর্মী। তারপর সোমনাথ বাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান সমস্ত রাজনৈতিক দলের বিধায়ক। বিধানসভা পর্ব শেষ হয় কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে গান স্যাল্যুট দিয়ে।
বিধানসভা চত্বরে শেষ শ্রদ্ধা মুখ্যমন্ত্রীর। এক্সপ্রেস ছবি: পার্থ পাল
এরপর সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত তাঁর দেহ রাখা থাকবে রাজা বসন্ত রায় রোডের বাসভবনে। যেহেতু তিনি দেহদান করে গিয়েছেন, তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে না, পরিবর্তে দেহ সমর্পণ করা হবে এসএসকেএম হাসপাতাল কে।
Former Lok Sabha Speaker Somnath Chatterjee dies in Kolkata Hospital
এই বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চিকিৎসার জন্য ১২ জন চিকিৎসকের দল গঠন করা হয়েছিল। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত থাকা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লোকসভার স্পীকার ছিলেন। দিল্লিতে তখন ইউপিএ ওয়ান সরকার ছিল। দশবার লোকসভার নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন তিনি। সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন এই নেতা। ১৯৬৮ সাল থেকে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
মোহনবাগানের তরফ থেকে ফ্ল্যাগের পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা। ছবি: শশী ঘোষ
দীর্ঘ সময় পার্লামেন্টকে দিয়েছেন তিনি। ১৯৭১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন তিনি। শুধুমাত্র ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে 'আউটস্ট্যান্ডিং পার্লামেন্টেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড' দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে তাঁকে প্রোটেম স্পিকার হিসাবে নিয়োগ করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৪তম লোকসভা স্পীকার হিসাবে নির্বাচিত হন। গণেশ বাসুদেব মাভালঙ্কারের পরে তিনিই দ্বিতীয় প্রোটেম স্পীকার যাকে পরবর্তীকালে অবিসংবাদিতভাবে লোকসভার স্পীকার নির্বাচিত করা হয়।
হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে আনা হলো মরদেহ। ছবি: শশী ঘোষ
আরও পড়ুন, Somnath Chatterjee, Dies at 89: শেষ সাক্ষাৎকারে অকপট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
১৯২৯ সালে আসামের তেজপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পড়াশোনা প্রথমে মিত্র ইনস্টিটিউশনে, এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ। এরপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েন তিনি। কেমব্রিজের জেসাস কলেজ থেকে আইন নিয়ে ১৯৫২ সালে বিএ ও ১৯৫৭ সালে এমএ পাশ করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ২০০৭ সালে সেই কলেজ তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়। লন্ডনের মিডিল টেম্পল থেকে ডাক পান তিনি কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে লিগাল প্র্যাকটিসে যোগ দেন তিনি। পরে আসেন ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায়। ১৯৬৮ সালে সিপিআইএমে যোগ দেন। ২০০৮ সালে বহিষ্কারের আগে পর্যন্ত সেই পার্টির সদস্য ছিলেন।
রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়িতে শূন্য আসন। এক্সপ্রেস ছবি: পার্থ পাল
স্পীকারের পদ থেকে ইস্তফা না দেওয়ার জন্য ২০০৮ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সিপিআইএম থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপরেই ইউপিএ জোট থেকে নিজেদের সমর্থন তুলে নেয় সিপিএম পার্টি।তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে।সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
টুইটে শোকপ্রকাশ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীরও