Advertisment

নৃপেন চক্রবর্তীকে মর্যাদা দিয়েছিল দল, কিন্তু লাল পতাকা অধরাই থাকল সোমনাথবাবুর

মৃতদেহে লাল পতাকা জড়ানোর ইচ্ছা পূরণ হল না বাংলার সিপিএম নেতাদের। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল না। কিন্তু ত্রিপুরার বহিষ্কৃত নৃপেন চক্রবর্তীকে শেষ লগ্নে দলে ফিরিয়ে নিয়ে মর্যাদা দিয়েছিল সিপিএম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সোমনাথ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাসভবনের বাইরে সিপিএমের রবীন দেব এবং সুজন চক্রবর্তী (ছবি- শশী ঘোষ)

ত্রিপুরায় নৃপেন চক্রবর্তীকে দল মর্যাদা দিয়েছিল। কিন্তু এ রাজ্যে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সেই মর্যাদা দিতে পারল না সিপিএম। গতকাল তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সিপিএম পলিটব্যুরো কোনওরকম বিবৃতি দিয়েই দায় সেরেছে। এদিকে রাজ্য সিপিএমের তাবড় নেতারা হাসপাতালে ছুটেছেন। দল থেকে তাড়ানোর প্রশ্ন উঠলেই এড়িয়ে গিয়েছেন সযত্নে। সোমনাথবাবুকে পিতৃসম বলতেও ছাড়েন নি অনেকে।

Advertisment

বিতাড়িত হয়েও দলবদলের কথা কখনও ভাবেননি লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ। কিন্তু যে দলের হয়ে ১০ বার সাংসদ হয়েছেন, সেই দলের রাজ্য দফতরে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল না। মরদেহের গায়ে জড়ানো গেল না লাল পতাকাও। সিপিএম নেতারা আবেদন করলেও আপত্তি জানান সোমনাথ বাবুুর পরিবারের সদস্যরা। মোহনবাগান ক্লাবের পতাকা দিয়ে তাঁর দেহ ঢেকে দেওয়া হয়।

Somnath chatterjee body mohun Bagan flag দেহে মোহনবাগান ক্লাবের পতাকা, লাল পতাকা নয়। ছবি: শশী ঘোষ

গত জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়় ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অকপটে অনেক কথা বলেছিলেন। তখন দলে ঢুকলে কী করবেন, স্বাভাবিক ভাবে আলোচনায় এই প্রশ্ন ছিলই। আরও স্বাভাবিক ভাবে, প্রবীণ ওই রাজনীতিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দল ডাকলে তিনি ভাববেন। কিন্তু ডাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।

তারপর বারে বারে তিনি অসুস্থ হয়েছেন। কয়েক দফায় সোমনাথবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তবুও সিপিএম কখনও ভাবেনি। কিন্তু দেহ রাখার পর একে একে ছুটেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। নৃপেনবাবুর ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, এক্ষেত্রে কেন তা হল না, সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে দলীয় নেতৃত্বের মধ্যেও।

আরও পড়ুন: শেষ সাক্ষাৎকারে অকপট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

সূত্রের খবর, রবিবার সকালে যখন ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের খবর দল জানতে পারে, তখন পার্টির অভ্যন্তরে নৃপেন চক্রবর্তীর আলোচনা শুরু হয়েছিল কয়েকজনের মধ্যে। তবে তা ওই আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কার্যকরী করার কোনও উদ্যোগ দলীয় নেতৃত্ব নিতে পারেননি। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, সোমনাথ বাবুকে সরাসরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বহিষ্কার করেছিলেন। সেক্ষেত্রে দলে তড়িঘড়ি ফেরানো কঠিন ছিল বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু দলের একাংশের মতে, ত্রিপুরায় নৃপেন চক্রবর্তীকে ফেরানো যদি সহজ হয়েছিল, তাহলে ১০ বারের দলীয় সাংসদের ক্ষেত্রে কেন নয়?

publive-image মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ঢুকছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। ছবি: শশী ঘোষ

সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, নৃপেনবাবুকে দল যে সদস্যপদ ফিরিয়ে দিয়েছিল, তার কৃতিত্ব প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। ত্রিপুরায় সিপিএম নেতৃত্বের একটা বড় অংশ উঠে এসেছিলেন নৃপেনবাবুর হাত ধরেই। মানিক সরকার ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাই একেবারে শেষ মুহূর্তে কোমায় থাকা অবস্থায় দল ফিরিয়েছিল নৃপেনবাবুকে। ত্রিপুরা সিপিএম দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিল। মৃত্যুর পর লাল কাপড়ে তাঁকে ঢাকা হয়েছিল।

কিন্তু বাংলায় তা সম্ভব হল না। ত্রিপুরা সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, "নৃপেনবাবু মৃত্যুর সময় দলের সদস্য ছিলেন। সোমনাথবাবু ছিলেন না।" আর একটা কথাও তিনি বলতে চাইলেন না।

বস্তুত, সোমনাথবাবু ১০ বারের সাংসদ হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন অনেক বেশী বয়সে। তাঁর থেকে বয়স কম হলেও বাংলার অন্য নেতারা শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। দলের একাংশের মতে, ত্রিপুরায় নৃপেনবাবুর যেমন মানিক সরকার ছিলেন, তেমন কেউ এখানে ছিলেন না।

এদিন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম সোমনাথবাবুর মৃত্যুকে পিতৃ বিয়োগের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এছাড়া সুজন চক্রবর্তী, শমিক লাহিড়ী, অনেকেই নিত্য যোগাযোগ রাাখতেন সোমনাথবাবুর সঙ্গে।

আরও পড়ুন: লোকসভা অধ্যক্ষ হিসেবে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের শেষ ভাষণ: দেখুন ভিডিও

দলে ফেরানোর ইস্যুতে বিরোধীরাও তোপ দাগতে ছাড়েনি সিপিএমকে। বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরা এদিন বলেছেন, সিপিএম মর্যাদা দিল না প্রবাদপ্রতিম এই রাজনীতিককে। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের এই নিয়ে ক্ষোভ নেই এমন নয়। তবে এদিন প্রত্যেক সিপিএম নেতাই এই প্রশ্ন অত্যন্ত সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন।

সিপিএমের একাংশ মনে করছেন, দলের ১০ বছরের সাংসদকে দলীয় পতাকায় মুড়ে মর্যাদা দিলে দলের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ফিরত। সিপিএম কাউকে বহিষ্কার করলে দলে ফিরতে হলে তাঁকেই আবেদন করতে হয়। এটাই নাকি নিয়ম। তবে সোমনাথবাবু চেয়েছিলেন, দল তাঁকে বলুক ফিরে আসতে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি।

Cpm somnath chatterjee
Advertisment