Advertisment

লকডাউন আর বাড়ালে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর, হুঁশিয়ারি সোনিয়ার

"৩ মে-র পর ঠিক কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট কোনও ধারণা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সোনিয়া গান্ধী। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের জেরে আগামী ৩ মে-র পর দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলে তার পরিণতি আরও অনেক ভয়ঙ্কর হবে। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে ভারতের কংগ্রেস পার্টি, যা এনডিএ সরকারের লকডাউন ঘোষণা করার সিদ্ধান্তকে প্রথমে সমর্থন করেছিল। গত ২৫ মার্চ ঘোষিত লকডাউনের পর থেকে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে পার্টির সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, গত তিন সপ্তাহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এই ভাইরাসের প্রভাব, এবং তার বিস্তারের গতি।

Advertisment

"লকডাউন চলতেই থাকছে, যার ফলে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সমাজের বহু শ্রেণীর মানুষ - বিশেষ করে কৃষক, ক্ষেতমজুর, পরিযায়ী শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প সবই একরকম অচল হয়ে পড়েছে, ধ্বংস হয়ে গিয়েছে কোটি কোটি জীবিকা।

"৩ মে-র পর ঠিক কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট কোনও ধারণা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। এই ধরনের লকডাউন যদি তার পরেও চলে তবে তার পরিণতি আরও ভয়ঙ্কর হবে," বলেন সোনিয়া।

তিনি আরও বলেন যে তিনি বহুবার প্রধানমন্ত্রীকে গঠনমূলক সহযোগিতার প্রস্তাব এবং একাধিক পরামর্শ দিয়ে চিঠি লিখেছেন, "যাতে শহর এবং গ্রামাঞ্চল, দুইয়েরই বাসিন্দাদের কষ্ট লাঘব করা যায়"।

সোনিয়ার বক্তব্য, "এই সব পরামর্শ আমরা একত্র করেছিলাম বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ওপর নির্ভর করে, যাদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরাও। দুর্ভাগ্যক্রমে, এইসব পরামর্শ আংশিকভাবে মানা হয়েছে, অত্যন্ত কৃপণের মতো। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যে সমব্যথা, বা উদারতা, বা উৎসাহ প্রত্যাশিত, তার এতই অভাব যে তা চোখে পড়ছে।"

সোনিয়া আরও বলেন, "আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে স্বাস্থ্য, খাদ্য সুরক্ষা, এবং জীবিকার বিষয়গুলির ওপর। আমরা বহুবার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি যে টেস্টিং, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং কোয়ারান্টাইনের কোনও বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যবশত, এখনও টেস্টিংয়ের হার সীমিত, এবং যথেষ্ট পরিমাণ টেস্টিং কিট নেই, থাকলেও সেগুলি নিম্নমানের। আমাদের ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই (PPE) কিট দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু সেগুলির সংখ্যা এবং মান, কোনোটাই যথেষ্ট নয়।"

"জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় সমস্ত প্রাপকের কাছে তাঁদের প্রাপ্য খাদ্যশস্য পৌঁছয় নি। ভর্তুকি-যুক্ত খাদ্যশস্য যাঁদের প্রয়োজন, এমন ১১ কোটি মানুষ গণবণ্টন ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন। আমাদের দায়বদ্ধ থাকা উচিত, এই সঙ্কটের সময় প্রতি মাসে ১০ কেজি খাদ্যশস্য, ১ কেজি ডাল, এবং ৫০০ গ্রাম চিনি, পরিবারের প্রতিটি সদস্যের কাছে পৌঁছনোর। লকডাউনের প্রথম পর্বে খোয়া গিয়েছে ১২ কোটি চাকরি। অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে যাওয়ায় বেকারের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। পরিবার পিছু অন্তত ৭,৫০০ টাকা দিয়ে সঙ্কট কাটাতে সাহায্য করা উচিত," বলেন তিনি।

পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, তাঁরা এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটক, কর্মহীন, এবং বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া, ফলে "এই কঠিন সময়ে টিকে থাকতে গেলে তাঁদের খাদ্য সুরক্ষা এবং আর্থিক নিরাপত্তা অতি আবশ্যক"।

"কৃষকদেরও গুরুতর সমস্যা হচ্ছে। সরকারের অস্পষ্ট এবং দুর্বল খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতি এবং ব্যাহত সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যার অবিলম্বে সমাধান করা উচিত। আগামী দু'মাসের মধ্যে যে খারিফ শস্যের বীজবপন শুরু হবে, তার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধে দিতে হবে কৃষকদের। মাঝারি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলিতে বর্তমানে কাজ করেন প্রায় ১১ কোটি মানুষ। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ আসে এই ক্ষেত্র থেকে। এদেরকে আর্থিক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা করা উচিত," বলেন তিনি।

বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং কুসংস্কার ছড়ানোর অভিযোগ এনে তিনি বলেন, "যেখানে আমাদের একত্রিত হয়ে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করা উচিত, সেখানে বিজেপি এখনও সাম্প্রদায়িক কুসংস্কার এবং বিদ্বেষের ভাইরাস ছড়াচ্ছে। আমাদের সামাজিক সংহতির গুরুতর ক্ষতি করা হচ্ছে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment