শব্দদানবের অত্যাচার থেকে নিস্তারের কোনও উপায় নেই সাধারণের। শয়ে শয়ে চোঙ বেঁধে রাজনৈতিক সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান চলছে রমরমিয়ে। অভিযোগ করলেও কোনও প্রতিকার নেই। পরিবেশবিদরা প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন। কিন্তু কে নেবে ব্যবস্থা? তা নিয়ে ঠেলাঠেলি চলছে পুলিশ এবং দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের মধ্যে। অর্থাৎ শব্দবিধি আইন যে পুস্তকেই আটকে রয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
শব্দের বিভীষিকায় মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তবু মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথ নেই। পরিবেশবিদদের দাবি, যাঁদের শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করার কথা, তাঁরাই রোজ নিয়ম ভাঙছেন। শাসক হোক বা বিরোধী, কোনও রাজনৈতিক দলই শব্দমাত্রার আইন মেনে চলে না। এই রাজ্যে প্রতিনিয়ত পরিবেশের নিয়মবিধি ভাঙাই হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির প্রধান কাজ। তাদের এজেন্ডায় পরিবেশের কোনও গুরুত্ব নেই।
আরও পড়ুন: মৃত্য়ু মিছিলের বিরাম নেই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনেও, কিন্তু দায় কার!
এলাকা ভিত্তিক শব্দদূষণের মাত্রার তারতম্য রয়েছে। কমার্শিয়াল এলাকায় ৫৫ ডেসিবেল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় ৬৫ ডেসিবেল, রেসিডেনশিয়াল এলাকা হলে ৪৫ ডেসিবেল। কলকাতার আশেপাশে এভাবে এলাকা ভাগ করা নেই। তবে সল্টলেক পুরোটাই রেসিডেনশিয়াল এলাকা।
পরিবেশবিদ নব দত্তর দাবি, "এ রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় পরিবেশ নেই। পরিবেশটাকে গুরুত্ব দিতে চায় না। প্রতিবাদ করলেই প্রয়োজনে আমাদের পরিবেশ বিদ্রোহী, দেশদ্রোহীর তকমা দিয়ে বিভিন্ন মামলা করে নাস্তানাবুদ করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো শব্দবিধিকে মান্যতা দিলে এটা ভাবতে হত না। পুলিশ ক্ষমতাবান লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়, তাছাড়া নিজেদের অনুষ্ঠানেই আইন মানে না। কে কাকে আইন মানাবে? কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও মানা হয় না।" তাঁর দাবি, প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ রাজ্যে ১১ জন "শব্দ শহিদ" হয়েছেন।
শব্দের মাত্রা ভাঙা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয় না এমন নয়। নববাবু জানান, প্রশাসনিক ভাবে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানানো হয়। কিছুক্ষণের জন্য় বন্ধ থাকে। তারপর আবার চালু হয়। তাছাড়া নাম গোপন রাখা হবে বললেও মানুষ ভয় পান। তাঁর দাবি, নাম প্রকাশও পেয়ে যায়। একাধিকবার এই ঘটনা ঘটেছে।
শব্দের মাত্রা নিয়ে সাধারনের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু কে শোনো কার কথা! কত বেশি দূর পর্যন্ত শব্দ শোনা যাবে, বা কত জোরে শোনা যাবে, তা নিয়ে চলে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা। কানে তালা লেগে যায়, কিন্তু তাতে কী যায় আসে উদ্যোক্তাদের? কোনো তোয়াক্কাই করে না পুলিশ-প্রশাসনকে। আর শব্দ বিধি মানানোর জন্য কে উদ্যোগ নেবে? কার দায়, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি করতেই ব্যস্ত পুলিশ এবং দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদ। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকার বলেন, "অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাধারনত কালী পুজোর সময় এমন অভিযোগ আসে। ৬৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ হচ্ছে কিনা তা পরিবেশ দপ্তর নিয়ন্ত্রন পর্ষদ দেখে।" বস্তুত, বছরের অন্য সময়ে শব্দদানবের সীমাহীন নির্যাতন সহ্য করেন সাধারন মানুষ।
অন্য দিকে, দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদ বিষয়টা পুলিশের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, “আদালতের নির্দেশ রয়েছে, সাউন্ড লিমিটর লাগানো বাধ্যতামূলক। চোঙ বা যে কোনও মাইক্রোফোন ব্যবহার হোক না কেন, সাউন্ড লিমিটর লাগাতেই হবে। এ বিষয়ে অভিযোগ থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।" পুলিশ বা দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের কী ভূমিকা, তা নিয়ে সন্দিহান রয়েই যান সাধারন মানুষ।