তৃণমূলেই ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? চূড়ান্ত জল্পনা তৈরি হল ভাইফোঁটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতির খবরে। জানা যাচ্ছে, শোভনের সঙ্গে কালীঘাটে মমতার বাড়িতে এদিন গিয়েছেন তাঁর বান্ধবী তথা অধ্যাপিকা তথা বিজেপি নেত্রী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এরপরই ঘরের কাননের ঘরে ফেরার জল্পনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার তৃণমূল মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে দু’দনেই জানান, ‘‘অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে’’। সেদিন পার্থ-বৈশাখীর সাক্ষাতের পরই এ জল্পনা অনেকটাই জল-হাওয়া পেয়েছিল। যদিও তৃণমূলে ফেরার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘পুজোতে শোভনদার সঙ্গে এজন্যই মন কষাকষি হয়’
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভনের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে মমতার সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। মমতার উপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৪ অগাস্ট বিজেপিতে যোগ দেন শোভন। এদিন ভাইফোঁটায় মমতার বাড়িতে গিয়ে দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর কাননের দূরত্ব ঘুচল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। ফলে শোভনের তৃণমূলে ফেরা এখন শুধু স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত শোভন-বৈশাখীর, ‘অপমান সহ্য করে পুরানো দলেই থাকা যেত’!
EXCLUSIVE: দেবশ্রী রায়: ‘শোভন-বৈশাখী যাবে জানলে আমি পরের দিন যেতাম’
জানা যাচ্ছে, ভাইফোঁটা নিতে মমতার বাড়িতে গিয়েছেন শোভন। উল্লেখ্য, মমতার ভাইফোঁটা মিস করেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে বিজেপিতে যোগদানের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে কালীপুজো হয়। চল্লিশ বছর সেখানেই সময় কাটিয়েছি। পুজোতে আমি কী করতাম তা আমি জানি। কিন্তু, পারিবারিক কারণে বিচ্ছেদ মামলা চলছে আমার। যখন দেখলাম, যার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য এবং বাড়ি ছেড়ে আসার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় পরামর্শ ও নির্দেশ দিয়েছিলেন অন্য বাড়িতে থাকতে, তাকে সামনে রেখেই পুজো হচ্ছে, তখন আমি মাঝ পথ থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। অথচ উনিই (মমতা) বলেছিলেন, কীভাবে রত্না চট্টোপাধ্যায় আমার জীবনে বিপদ আনতে পারে, আমি খুন হয়ে যেতে পারি, আমার জীবনহানির আশঙ্কা করেছিলেন, তবু তাকে সামনে রেখেই কালীপুজো হল, ফলে আমি ফিরে এলাম। আর ভাইফোঁটায় তিনি আর আমায় ডাকেননি, হয়তো মনে করেছেন, ভাই হিসেবে যা থাকা দরকার তা আমার নেই। তাই যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না’’।
আরও পড়ুন: বৈশাখীকে ‘চরম হেনস্থা-গালিগালাজ’, কলেজে ধুন্ধুমার
উল্লেখ্য, বিজেপিতে যোগদানের আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের কালো মেঘ সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একবার মধ্যরাতে শোভনের ফ্ল্যাটেও যেতে দেখা গিয়েছিল পার্থকে। কিন্তু সে সময় শোনা যায়, তৃণমূলে যে তিনি থাকবেন না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় পার্থকে জানিয়েছিলেন শোভন। এদিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শোভন-বৈশাখীকে ঘিরে অসন্তোষ প্রকাশ করে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। বিজেপিতে যোগদানের দিন দিল্লিতে দলের সদর দফতরে তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের উপস্থিতি নিয়ে চরম নাটক চলে। ‘দেবশ্রী রায় বিজেপিতে যোগ দিলে আমরা যোগ দেব না’, পদ্মবাহিনীর উপর এ শর্তই চাপিয়েছিলেন শোভন। এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় বঙ্গ বিজেপিতে। পাশাপাশি কলকাতায় ৬ মুরলীধর সেন লেনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বৈশাখীকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে চরম ক্ষোভপ্রকাশ করেন বৈশাখী। এরপর থেকেই শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের অসন্তোষ সামনে আসে। আচমকাই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন শোভন-বৈশাখী। এরপরই এই যুগলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে বিজেপির। সেই প্রেক্ষাপটে আবারও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হঠাৎ সাক্ষাৎ এবং এদিন যুগলের মমতার বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।