শোভন চট্টোপাধ্যায় কি তৃণমূলেই ফিরছেন? টান টান ‘নাটক’ বঙ্গ রাজনীতিতে। বৃহস্পতিবার নবান্নে গেলেন শোভন-বান্ধবী তথা বিজেপির সদস্য বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জেরে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে জল্পনা নয়া মোড় নিল। এ যাবৎকাল শোভনের সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেই একাধিকবার বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে বৈশাখীকে। এই প্রথম এ পর্বে নবান্নে গেলেন বৈশাখী। তবে কি শোভনের তৃণমূলে ফেরার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আলোচনা করতে নবান্নে গেলেন বৈশাখী? তুমুল চর্চা রাজ্য রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: ‘করোনায় কানন যেন সাবধানে থাকে’, বৈশাখীকে পরামর্শ উদ্বিগ্ন মমতার
বৈঠক শেষে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, ‘‘নবান্নে যাওয়ার সঙ্গে শোভনের তৃণমূলে ফেরার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি আমার কলেজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। দিদি আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি দেখবেন’’। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পুরভোটের মুখে শোভনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে যে চর্চা চলছে, তাতে এই প্রেক্ষিতে নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখীর বৈঠক রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগদানের পরপরই গেরুয়াবাহিনীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় শোভনের। এরপর বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে প্রাক্তন মন্ত্রীর। সেসময়ই সকলকে কার্যত চমকে দিয়ে ভাইফোঁটায় কালীঘাটে মমতার বাড়িতে বান্ধবী বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে যান শোভন। যদিও তারপরও শোভনের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব ঘোচেনি।
আরও পড়ুন: শোভন চাইলে আমি হাসিমুখে সরে যাব: রত্না
এদিকে, গত শনিবার শোভনের দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের ওয়ার্ড (১৩১ নং) ও বিধানসভা কেন্দ্রের (বেহালা পূর্ব) দায়িত্ব তুলে দিয়েছে মমতার দল। মমতা ব্রিগেডের এই সিদ্ধান্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরার আশায় জল ঢেলে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এরপর হোলির দিন কার্যত নয়া জল্পনার জন্ম দেয় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠক।
আরও পড়ুন: শোভন একদমই নিস্তেজ নয়, মনে হয় না রাজনৈতিক শোকবার্তা লেখার সময় এসেছে: বৈশাখী
সেদিন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেছিলেন, ‘‘শোভনদা তৃণমূলে সক্রিয় হবেন কি হবেন না, কোন দলে থাকবেন, তা ওঁর সিদ্ধান্ত। শোভনবাবু একজন রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নেতা। ৩৫ বছর ধরে উনি রাজনীতিতে সক্রিয়। আমার মনে হয় না, উনি নিজের সম্পর্কে এতটা অসচেতন যে কেউ সক্রিয় হচ্ছেন বলে উনি নিজে সক্রিয় হবেন না। এমন বিবেচনা করবেন না বলেই মনে করি। উনি এখনও মানুষের মনে আছে। উনি একদমই নিষ্ক্রিয় ও নিস্তেজ নয়। কোনদিন কোথায় অবতীর্ণ হবেন, সেটা তো ভবিষ্যৎ বলে দেবে। আমার মনে হয় না ওঁর রাজনৈতিক শোকবার্তা লেখার সময় এসেছে’’। উল্লেখযোগ্যভাবে সেদিন পার্থর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে বৈশাখী বলেন, শোভনবাবুর ক্ষেত্রে পার্থবাবুর একটি স্নেহ কাজ করে। আর তাছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাইলেই তো শোভন তৃণমূলে ফিরতে পারেন না। তৃণমূলে আরও অনেক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও পাওয়ার লবি আছে।
এদিকে, বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শোভনবাবু যদি তৃণমূলে ফিরে এসে বলেন রত্নাকে সরিয়ে দাও, আমিই দেখব। তাহলে আমি হাসিমুখে ফিরে আসব। শোভনবাবু দায়িত্ব নিক আমরা সকলে চাই’’। এ প্রেক্ষিতে বৈশাখী পাল্টা বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। শোভনও বলেছেন, রত্নার কথায় কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। যা সিদ্ধান্ত নেব তা উচ্চনেতৃত্বকে জানাব’’।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন