‘‘জীবন চলে যায় যাবে, অর্জুনের পাখির চোখ করে সকলকে এগোতে হবে, বাংলাকে ফের মুক্ত করতে হবে। গঠনমূলক সরকার গড়তে হবে’’, বিজেপি রাজ্য দফতরে প্রথমবার পা রেখে প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে এই ভাষাতেই লড়াইয়ের ডাক দিলেন বিজেপি-তে 'নবাগত সৈনিক' শোভন চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপি দফতরে সংবর্ধনা নেওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতার একদা প্রিয় ‘কানন’। শোভন এদিন বলেন, ‘‘তৃণমূলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে কাটিয়েছি। তাই গত ৮ মাস কর্মসূচি থেকে দূরে ছিলাম। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে কাটিয়েছি’’। পাশাপাশি বাম জমানার সঙ্গে পরিবর্তনের সরকারের তুলনা টেনে শোভনের মন্তব্য, ‘‘এখনকার মতো সংগঠিত সন্ত্রাস বাম আমলেও দেখিনি’’।
আরও পড়ুন: চরম ক্ষুব্ধ বৈশাখী! ‘বিজেপিতে আর পা-ই রাখতাম না, শুধু শোভনবাবুর জন্যই আসছি’
মমতা সরকারকে সমালোচনায় ফালাফালা করে এদিন ক্ষমতাচ্যূত করার ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু করার বার্তাও দিয়েছেন শোভন। দিলীপ ঘোষের পাশে বসে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বলেন, ‘‘রাজনীতিতে আগে একজন ভাল কর্মী হওয়া দরকার। ভাল কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই। দিলীপদাকে নতমস্তকে বলছি, আপনি যেভাবে পরিচালনা করবেন, বিজেপি যেভাবে মনে করবে, সেভাবেই কাজ করব। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অর্জুনের পাখির চোখ করে সকলকে এগোতে হবে, বাংলাকে ফের মুক্ত করতে হবে। গঠনমূলক সরকার গড়তে হবে’’।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখী ‘ভাত-ডাল’, মত দিলীপের! মানে বুঝলেন না ‘অসন্তুষ্ট’ বৈশাখী
প্রসঙ্গত, বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থেকেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা পুর প্রশাসন এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় তৃণমূলের সংগঠন তৈরিতেও তাঁর বিশেষ অবদান ছিল বলে মনে করে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সেই শোভন সম্প্রতি বিজেপিতে যোগদানের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৈরির জন্য সব নষ্ট করে জীবন দিয়ে দিয়েছিলাম...আর উনি রাজনীতি করলেন’’। মমতা ও তৃণমূলের প্রতি তাঁর মোহভঙ্গের সেই ধারা অব্যাহত রেখেই এদিনও ঝাঁঝালো আক্রমণ হানেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। প্রাক্তন দলকে বিঁধে শোভন এদিন বলেন, ৩৪ বছর ধরে পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে অত্যাচার চালিয়েছিল। বাংলার মানুষ মুক্তি চেয়েছিল। অথচ বাংলার মানুষ পরিবর্তনের দিশারী হিসেবে যে তৃণমূলকে ভেছেছিল, তারা মাত্র ৮ বছরে সিপিএম-কে ছাপিয়ে গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে বিজেপি যদি হাত ধরে সমর্থন না করত, তাহলে তৃণমূলের ঠিকানা অন্য হত। বাংলার মসনদে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে পারতেন না’’। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ফলাফল উল্লেখ করে শোভন বলেন, ‘‘যে সংখ্যাটা ১৮ দেখছেন, এটা হয়তো সাংসদের সংখ্যা। বাস্তবে ভোটাধিকার প্রয়োগ হলে, নবান্নের গদি বিলীন হয়ে যেত। কিছুক্ষেত্রে মানুষের রায় প্রতিহত হয়েছে’’।