জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজ্য রাজনীতির জল্পনা সত্য প্রমাণ করে শেষ পর্যন্ত বিজেপিতে যোগ দিলেন শোভন-বৈশাখী। মুকুল রায়ের পর শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যোগদানের মাধ্যমেই তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে সবচেয়ে বড় জার্সি বদলটি হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে যোগদানের দৃশ্য টিভিতে দেখে এদিন হেসে ফেললেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের দীর্ঘকালের জীবনসঙ্গী রত্না চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, কেন হাসছিলেন রত্না? রত্না বলেন, ‘‘হাসছিলাম। কারণ, উনি নৈতিকতার কথা বলছিলেন, অথচ কী নৈতিক কাজ করেছেন উনি? দুটো বাচ্চাকে ছেড়ে অনৈতিকভাবে জীবন যাপন করছেন। সেরকম একটা অনৈতিক লোক নীতির কথা বলছেন। তাই হাসছিলান। ওঁর মুখে নীতির কথা মানায় না’’। পাশাপাশি, শোভনের বান্ধবী বৈশাখীর বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে রত্নার কটাক্ষ, ‘‘বৈশাখী নাকি নেত্রী ছিলেন, কোনওদিন তো মিটিং-মিছিলে দেখিনি। একটা ওয়েবকুপার সেক্রেটারি পদ মানেই নেত্রী! ওঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার মানসিকতা নেই। এই মহিলা আমার ঘর ভেঙেছেন। ওই মহিলাকে দলে নিয়ে লজ্জাজনক সাংবাদিক সম্মেলন করল বিজেপি’’।
আরও পড়ুন: পদ্ম কাননে শোভন-বৈশাখী
Delhi: TMC MLA Sovan Chatterjee meets BJP Working President JP Nadda. Chatterjee joined the party earlier today. pic.twitter.com/aiAQmIlr0I
— ANI (@ANI) August 14, 2019
আরও পড়ুন: উনি যেদিন আসবেন, সেদিনই বিজেপি ছাড়বেন শোভন: বৈশাখী
কেন শোভন বিজেপিতে গেলেন? সে ব্যাখ্যাও এদিন দিয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শোভন যতদিন আমাদের (আমি, আমার ছেলে ও মেয়ে) সঙ্গে ছিলেন, নীতিগত ভাবে ঠিক মানুষ ছিলেন। ততদিন ভাল ছিলেন, তৃণমূলেই ছিলেন। মমতার হাত ধরে উনি রাজনীতিতে এসেছেন। ওঁর উত্থান আমি চোখের সামনে দেখেছি। আমি যখন বিয়ে করি, তখন উনি সামান্য কাউন্সিলর ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'সৎ মানুষের সঙ্গে আছি। কানন যেটা করছে, সেটা অন্যায়"। মমতা অনেকবার ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বোঝেননি। অনৈতিক কাজকর্মে মমতার সমর্থন পাননি শোভন, বেবেছে হয়ত বিজেপির সমর্থন পাবেন, তাই গিয়েছেন। শোভন-বৈশাখী দু’জনে যুক্তি করেই গিয়েছেন’’। রত্না আরও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভরসা রাখুন, ফের তৃণমূলই ক্ষমতাই ফিরবে। দেখবেন আবারও নির্বাচন হবে, কিন্তু মেয়র হবেন না শোভন’’। এখানেই না থেমে রত্না আরও বলেন, "শেষ পর্যন্ত দেখবেন, শোভনবাবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই ফিরতে হবে। যাঁর হাত ধরে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল, সেখানেই ফিরে আসতে হবে"।
আরও পড়ুন: বিজেপি দফতরে দেবশ্রী রায়
উল্লেখ্য, গত বছর রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পারিবারিক বিবাদে জড়িয়ে পড়েন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ওই একই সময়ে মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। এরপর থেকেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে কার্যত নিজেকে গুটিয়ে নেন শোভন। কলকাতার মেয়র ও মন্ত্রীত্ব থেকেও ইস্তফা দেন তিনি। এরপরই জল্পনা ছড়ায় তবে কি তিনি তৃণমূল ত্যাগ করছেন? যত দিন গড়ায়, ততই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে শোভনের। আবশেষে বুধবার বিজেপিতে যোগ দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।