ভোটে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য নিজের কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা হলেও ঠিক হয়নি খড়দহ কেন্দ্রে ভোটের দিনক্ষণ। তাই চরম অনিশ্চতায় ভুগছেন বর্ষীয়াণ মন্ত্রী তথা ঘাসফুলের প্রতীকে নির্বাচিত প্রথম বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর এই অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে। তাঁকেই যে বারে বারে ত্যাগ করতে হয় সেই আক্ষেপও করেছেন এই প্রবীণ তৃণমূল নেতা।
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'ভবানীপুরের সঙ্গে বাকি চার কেন্দ্রেও উপনির্বাচন হতে পারত। একই পরিস্থিতিতে যখন ভোট হচ্ছে তখন ওই কেন্দ্রগুলিতে ভোট করাতেই পারত। কিচ্ছু অসুবিধা ছিল না। এতে অনিশ্চয়তা বাড়ল। এটা কাম্য নয়।' ৬ মাসের মধ্যে ভোট না হলে মুখ্যমন্ত্রীর কী হবে? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহল আলোচনায় মশগুল ছিল। কিন্তু যিনি জয়ী কেন্দ্র ছেড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য এবার তাঁর হাল কী হবে, তা নিয়ে নিজের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে দিলেন শোভনদেব চট্টেপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- ‘কমিশন প্রভাবিত হয়েছে-তদন্ত হোক’, ভবানীপুরের উপনির্বাচন ঘোষণায় ফুঁসছেন দিলীপ
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম বিধায়ক। বারুইপুর কেন্দ্র থেকে পর পর দুবার হাত চিহ্নে জয়ী শোভনদেব চট্টেপাধ্যায়। বিধায়ক পদ ছেড়ে দিয়ে নয়া ঘাসফুল প্রতীকে ১৯৯৮-তে রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন তিনি। তিনিই প্রথম জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। এদিন শোভনবাবুর গলায় আফসোসের সুর স্পষ্ট। প্রাক্তন বক্সার বলেন, 'বারুইপুর থেকে পদত্যাগ করে আমাকে নিয়ে এল রাসবিহারী কেন্দ্রে। সেখান থেকে জয় পেয়ে সরে আসতে হয় ভবানীপুরে। ফের সেখান থেকে খড়দহে।' যদিও খড়দহের উপনির্বাচন ঘোষণা হয়নি। 'দলনেত্রীকে বিপুল ভোট জয় পেতে হবে। সেটা আমাদের দায়িত্ব।' একথাও জোরের সঙ্গে বলছেন প্রাক্তন বিধায়ক।
রাজনৈতিক মহলের মতে, আদতে বক্সার হলেও বেশি চিৎকার করা পছন্দ করেন না শোভনদেব। দলের স্বার্থে জীবনে দু'দুবার বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এই ঘটনাও বিরলই বলা যায়। ২০১১-তে পেয়েছিলেন মুখ্যসচেতকের দায়িত্ব। ২০১৬-তে বিদ্যুৎ ও অচিরাচরিত শক্তি দফতরের মন্ত্রী। এবার তো কৃষিমন্ত্রী। প্রথমবার ঝুঁকি নিয়ে নতুন প্রতীকে বিধায়ক হয়ে বিধানসভায় তৃণমূলের খাতা খুলেছিলেন। এবার মুখ্য়মন্ত্রীর জন্য পদত্যাগ করেছেন।
খড়দহের বিধায়ক না হলেও প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম একপ্রকার ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী সেখানে যাতায়াতও করছেন। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'খড়দহে নিয়মিত যাচ্ছি। ওরা জনপ্রতিনিধিই ভাবছে। বিশেষ করে ওখানে শনি বা রবিবার যাই।' তাঁর আপসোস, 'আমি অসুবিধায় পড়ে গেলাম।'
আরও পড়ুন- শুধু ভবানীপুরেই উপনির্বাচন ৩০ সেপ্টেম্বর, ওই দিনই ভোট বাংলার ২ কেন্দ্রে
রাজনৈতিক জীবনে শোভনদেববাবুর চলার পথ মসৃন ছিল না কখনও। রাজনৈতিক মহলের মতে, আশেপাশের অনেক ছুটকো নেতা রাজনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর ঘাত-প্রতিঘাত যেন একটু বেশিই। বিশেষ করে নির্বাচনে লড়াইয়ে জয় পাওয়ার পরও। কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'আমার জীবনে এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। কোনওটাই সহজ ভাবে হচ্ছে না। জটিলতা থাকেই। আমি এসব নিয়ে চিৎকার করতে ভালবাসি না। খুবই অনিশ্চয়তায় পড়লাম।'
করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে এক কেন্দ্রে উপনির্বাচন, দুই কেন্দ্রে নির্বাচন। রাজ্যের বাকি চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেনি। তাই নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এরই মধ্যে যাঁতাকলে পড়ে সত্তরোর্ধ্ব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন- কমতে কমতে ৭১, পদ্ম ছেড়ে জোড়া-ফুলে আরও এক বিজেপি বিধায়ক
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন