গতকাল পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আপাতত ব্যাক ফুটে বিজেপি। এবং প্রবলভাবে ফ্রন্ট ফুটে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। তারই প্রতিফলন দেখা গেল আজ কলকাতার রাণী রাসমনি অ্যাভিনিউতে। উজ্জীবিত, অন্তত বাহ্যিকভাবে ঐক্যবদ্ধ রাজ্য কংগ্রেস। যার নেতৃত্ব এক সুরে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
বক্তব্যের সারমর্ম হলো, ভিন রাজ্যে ভোটের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে সভা করার ডাক দিতে চলেছে। এবং রাজ্যে আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে একা লড়ার পক্ষে বক্তব্য রাখলেন প্রায় সব বক্তাই।
আজকের জনসভায় দলের কোনও শীর্ষনেতাই বাদ পড়েন নি। মালদার দুই সাংসদ মৌসম বেনজির নুর ও আবু হাসেম খান চৌধুরী, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাসমুন্সি, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, প্রবীণ নেতা দেবীপ্রসাদ রায়, বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। জাতীয় স্তরে বহু প্রতীক্ষিত সাফল্য কীভাবে রাজ্য নেতৃত্বকে এক ছাতার তলার নিয়ে আসতে পারে, আজকের সভা তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সব বক্তাই এক সুরে জানিয়ে দিলেন, এ রাজ্যেও একলা চলেই সাফল্য আসবে কংগ্রেসের। জনতা রায় দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হবেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও তাঁদের দাবি।
১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে সভা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। ৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে সভা করবে সিপিএম। বিজেপিও তোড়জোড় শুরু করেছে ব্রিগেডের। এবার অবশেষে কংগ্রেসও প্রস্তুত হচ্ছে ব্রিগেডে জনসভার জন্য। এরাজ্যে এআইসিসির পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ বলেন, "দিল্লির মত বাংলায়ও সরকার গড়বে কংগ্রেস। ব্রিগেডে সভা করব আমরা। সেই সভায় আসবেন রাহুল গান্ধী।"
ব্রিগেডে সভা প্রসঙ্গে অধীরও জানান, "আগামী দিনে ব্রিগেডে সভা হবে। সেখানে কফিনের শেষ পেরেক পোঁতা হবে।" সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, "ব্রিগেডে সভা করার কথা ভাবুন। সোমেনবাবু, ভয় পাবেন না। কংগ্রেসের দুএকজন নেতাকে নিয়ে গিয়ে কংগ্রেসকে দুর্বল করতে চাইছে। আগামী ২০১৯ লোকসভা ও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে একার শক্তিতেই লড়াই করবে কংগ্রেস।"
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের জয়ী ছ'টি আসন শুধু নয়, আরও লোকসভা আসন দখল করবে বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। এদিন চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রীকে। বলেন, "এই ফলাফলের দরুন দিদিভাইয়ের ঘুম ছুটে গিয়েছে। দিদির ভাল লাগছে না। তিনি প্রশংসা করতে পারছেন না। মুখে রাহুল গান্ধীর নাম আনছেন না। দিল্লির চেয়ার রাহুলের জন্য, আর কারও নয়। আগামী দিনে তৃণমূল মুছে যাবে।"
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিণত করা যায় না। আগামী দিনেও যাবে না। অনেকেই কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিণত করতে চেয়েছেন। তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। ২০১৯-এ রাহুল প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হবে। আর কেউ নয়।" আবার একবার এ রাজ্যে 'পরিবর্তনের' ডাক দিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও জানিয়ে দেন, "যাঁরা এরাজ্যে মোদীর মত কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, তাঁদেরও মোদীর মতই হাল হবে। আগামী দিনে কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ত্রাস হয়ে উঠবে।"
পরিশেষে, কোনও রাজনৈতিক দলের সভায় কর্মী-সমর্থকদের দীর্ঘক্ষণ ভাষণ শোনার ধৈর্য বড়ো একটা থাকে না। সভা শুরু হওয়ার কিছু পরেই ময়দান ফাঁকা হতে শুরু করে। কিন্তু এদিন কংগ্রেসের সভায় বক্তারা কী বলেন, তা মনোযোগ সহ শোনেন কর্মীরা। তাছাড়াও, ইদানিংকালে প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও সভায় এত মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় নি। সেদিক থেকেও আজকের সভা বিশেষ বটে। এভাবে চললে ব্রিগেডে সভা ডাকতে সত্যিই বোধহয় ভয় নেই।