Advertisment

সাত মাস কাটল, কেউ কথা রাখেনি

‘‘সাত মাস হয়ে গেল। এখন আমাদের কাছে কেউ আসে না। আমার মেয়েকে যে চাকরি দেওয়ার কথা তার জন্যে আমরা এখনও অপেক্ষা করছি। আমার বিধবা পেনশন এখনও শুরু হয়নি।’’

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
afrazul-murder-75911

সেই নৃশংস হত্যার কিছু স্ক্রিনশট (ফাইল ফোটো- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

রাভীক ভট্টাচার্য

Advertisment

মহম্মদ আফরাজুলকে মনে আছে? একটু অচেনা লাগল নামটা? শম্ভুলাল রেগার? এবার একটু চেনা লাগছে? হ্যাঁ, রাজস্থানে যে বাঙালি শ্রমিককে পুড়িয়ে মেরেছিল শম্ভুলাল রেগার, যে ঘটনা ফোনের ক্যামেরায় তুলেছিল শম্ভুলালের ১৪ বছরের ভাইপো, এবং ছড়িয়ে দিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়, তার নাম মহম্মদ আফরাজুল।

ঘটনার পর ৭ মাস কেটে গেছে। আফরাজুলের পরিবার এখনও কোনওরকম সহায়তা পায়নি, যে সহায়তার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারের তরফ থেকে। না বিধবা ভাতা, না কোনও চাকরি।

২০১৭-র ৭ ডিসেম্বরের সেই ভয়াবহ ঘটনার পর আফরাজুলের বাড়িতে নেতাদের লাইন পড়ে গিয়েছিল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন আফরাজুলের স্ত্রী গুলবাহার বিবিকে।

‘‘সাত মাস হয়ে গেল। এখন আমাদের কাছে কেউ আসে না। আমার মেয়েকে যে চাকরি দেওয়ার কথা তার জন্যে আমরা এখনও অপেক্ষা করছি। আমার বিধবা পেনশন এখনও শুরু হয়নি। কাগজপত্র নিয়ে বিডিও অফিসে দৌড়োতে দৌড়োতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের অবস্থার কথা জানাতে চাই, কিন্তু কী ভাবে তাঁর কাছে পৌঁছতে হয় জানি না।’’ ফোনে বললেন গুলবাহার।

মালদহের সৈয়দাপুরে আফরাজুলের বাড়ি। গুলবাহার বললেন, ‘‘আমার স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় সব পার্টির লোক আসত। এমকি জেলা প্রশাসনের লোকেরাও এসে দেখা করে গেছে। এখন সবাইই আমাদের ভুলে গেছে।’’

আরও পড়ুন, জনসাধারণের টাকায় বিলাসিতা নয়, নবান্নের বৈঠকে বার্তা মমতার

স্ত্রী ছাড়া আফরাজুলের তিন মেয়ে রয়েছে। জ্যোশনারা, রেজিনা আর হাবিবা। তাদের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সন্তানাদিও রয়েছে তাঁদের। গুলবাহারের জামাইরাও শ্রমিকের কাজ করেন। আফরাজুলের মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকার তাঁর পরিবারের একজনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, ২২ বছরের রেজিনা, যিনি মাধ্যমিক পাশ করেছেন, তিনি চাকরি পাবেন। গুলবাহারের জন্য বিধবা ভাতারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার।

এ প্রসঙ্গে মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘‘বিধবা ভাতা স্যাংশন হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু গোলমাল রয়েছে, আমরা সেগুলো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি।’’

সরকার ও মন্ত্রীদের দেওয়া সাহায্যের টাকা ক্রমশ ফুরিয়ে আসায় সংসার চালাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন গুলবাহার।

‘‘পার্টি এবং অন্য সংগঠন আমাদের কিছু টাকা দিয়েছে। কয়েকজন মন্ত্রীর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা পেয়েছি। কিন্তু এ দিয়ে তো চলবে না। আমার ছোট মেয়েটার বিয়ে দিতে হবে।’’

গুলবাহারের প্রতিবেশী জুয়েল চৌধুরী বললেন, ‘‘চাকরি আর পেনশনের খবর নিতে আমরা প্রায়ই বিডিও অফিসে যাই।’’

গুলবাহার অবশ্য জানালেন, বিচারব্যবস্থার উপর তাঁর আস্থা আছে, তিনি বিশ্বাস করেন, ন্যায়বিচার তিনি পাবেনই।

এই মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিট দিয়েছে রাজসামন্দ পুলিশ। আপাতত জেলে আছে শম্ভুলাল। এই মামলা দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছেন গুলবাহার। সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিও চলছে।

Mamata Banerjee tmc Violence
Advertisment