নবান্ন দখলের লড়াইয়ের ম্যারাথন দৌড়ে বৃহস্পতিবার শেষ ল্যাপ। এই অষ্টম দফায় ৪ জেলার ৩৫টি আসনে ভোট। যেখানে গত পাঁচ বছর আগে মালদহের বৈষ্ণব নগর আসন শুধু জিতেছিল বিজেপি। তৃণমূলের সঙ্গে সমান টক্কর ছিল বাম-কংগ্রেস জোটের। কিন্তু তার ৩ বছর পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলায়। জোড়াফুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উত্থান হয় পদ্মের।
অষ্টম দফায় বীরভূমের ১১টি বিধানসভা আসনের সবগুলিতেই ভোট হবে। এ ছাড়া মালদহের ১২-র মধ্যে ৬, মুর্শিদাবাদের ২২-র মধ্যে ১১ এবং কলকাতার ১১টি আসনের মধ্যে ৭টি রয়েছে এই তালিকায়। গত ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় মুর্শিদাবাদ জেলার ২২টির মধ্যে বাকি ১১টি কেন্দ্রের ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে ভোট স্থগিত হয়। ওই দুই কেন্দ্রে ভোট আগামী ১৬ মে।
তবে পরিসংখ্যান মিলিয়ে একটু পিছিয়ে গেলে ২০১৬-র ভোটে এই ৩৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস জোট ১৭টি করে আসনে জিতেছিল। এর মধ্যে বামেরা ৩, কংগ্রেস ১৩ এবং জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ১টি আসনে জেতে।
৩ বছর পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলের হিসাবে তৃণমূল ৪ জেলার ওই ৩৫টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে এগিয়ে যায়। ১১টি আসনে এগিয়ে থেকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। কংগ্রেস ৫টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে থাকলেও বামেরা একটিতেও প্রথম স্থানে যেতে পারেনি। তবে ২০১৯-এ কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা ৫টি আসনের মধ্যে মালদহ জেলার ২টি বিধানসভা কেন্দ্রে (মোথাবাড়ি এবং সুজাপুর) বামেদের কোনও প্রার্থী ছিল না (বিধানসভা কেন্দ্র দু’টি মালদহ-দক্ষিণ লোকসভার অন্তর্গত)। মুর্শিদাবাদ জেলার ৩টি বিধানসভা আসনে (বহরমপুর লোকসভার অন্তর্গত বড়ঞাঁ, কান্দি এবং বহরমপুর) বামফ্রন্টের শরিকদল আরএসপি প্রার্থী দিলেও সিপিএমের সমর্থন পায়নি।
২০১৬-য় ওই ৩৫টি আসন মিলিয়ে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৮.৭৪ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ১১.৪৮ শতাংশ। বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ৪২.৫১ (২৩.৯১+১৮.৬০) শতাংশের কিছু বেশি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ভোট বেড়ে হয়েছে ৪১.১৭ শতাংশ। বিজেপি-র প্রায় ৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ৩০.৭৭ শতাংশ। আলাদা লড়ে বামেরা ৫.১৫ এবং কংগ্রেস ১৯.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ কমেছে বাম+কংগ্রেসের ভোট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটের দু’বছর বাদে ফের জোট করার পরে বাম-কংগ্রেসের ‘গড়’ রক্ষাই এ বার মূল চ্যালেঞ্জ। কিছু প্রাক নির্বাচনী জনমত সমীক্ষাতেও শেষ পর্বের ভোটে বিশেষত মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
অষ্টম দফায় ভোট হতে যাওয়া মালদহের ৬টি আসনের মধ্যে ২০১৬-য় জোটের দখলে গিয়েছিল ৫টি। এর মধ্যে কংগ্রেস ৪টি এবং জোট সমর্থিত নির্দল ১টি (ইংরেজবাজার) আসন জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল বৈষ্ণবনগর আসনে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক হিসাব বলছে, বিজেপি ৪ এবং কংগ্রেস ২টি আসনে এগিয়ে। বৈষ্ণবনগর, ইংরেজবাজারের পাশাপাশি কংগ্রেসের জেতা মালদহ এবং মানিকচকেও বিজেপি এগিয়ে।
মুর্শিদাবাদের যে ১১টি আসনে বৃহস্পতিবার ভোট হবে, তার মধ্যে ২০১৬-য় জোট ১০টি আসন পেয়েছিল। এর মধ্যে কংগ্রেস ৮ এবং সিপিএম ২টি। তৃণমূল ১টিতে (হরিহরপাড়া) জিতেছিল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসেব বলছে, তৃণমূল ৮ এবং কংগ্রেস ৩টি আসনে এগিয়ে।