পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। তার মধ্যেই শুক্রবার তৃণমূলে যোগ দিলেন বিনয় তামাং ও রোহিত শর্মা। রাজ্যের দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে জোড়া-ফুল পতাকা হাতে তুলে নেন এই দুই মোর্চা ত্যাগী নেতা। এর ফলে পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ তৈরি হল বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে উত্তপ্ত পাহাড় পরিস্থিতির পর জিটিএ প্রধানের দায়িত্ব সামলেচ্ছেন বিনয় তামাং। এক সময় দলনেতা বিমল গুরুংয়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হলেও পরে সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে। গুরুং পাহাড় ছাড়লে ক্রমশ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন বিনয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্রে জোড়া-ফুল প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছিল বিনয় তামাং নেতৃত্বাধানী মোর্চা শিবির। এমনকী তৃণমূলেও যোগ দেন তিনি।
কিন্তু, সম্প্রতি বিমল গুরুং ফের পাহাড় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। সেই সময়ই বিনয় তামাংয়ের রাজ্যের শাসক দল থেকে পদত্যাগের কথা শোনা যায়। পরে, দ্বিধা কাটিয়ে বিনয় তামাংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতও হয়েছে বিনয়ের। সেই সময়ই বিনয় তামাং দাবি করেছিলেন যে, এখন থেকে পাহাড়ে মোর্চা একটাই। নেতা হিসাবে গুরুংকে মেনে নেন তিনি। নতুন রাজ্য তৈরির বিজেপি-র প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা তাও স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। তখনই পাহাড় রাজনীতিতে নয়া মাত্রা যোগ হয়।
এরপর অবশ্য আর গোর্খা কর্মসূচিতে তেমনভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বিনয় তামাংকে। ফলে জল্পনা তৈরি হয় তাঁর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে। অবশেষে যা সত্যি হল। অন্যদিকে কার্শিয়াংয়ের প্রাক্তন গোর্খা বিধায়ক রোহিত শর্মাও এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
জোড়া-ফুলে যোগ দিয়েই বিজেপিকে নিশানা করেছেন বিনয় তামাং, একই সঙ্গে তিনি তৃণমূল নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান বলেও দাবি করেছেন। গোর্খা ত্যাগী এই নেতার কথায়, 'আমি ৬৪ দিন আগে তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ফের তৃণমূলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
তাহলে কী পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি থেকে সরে এলেন তিনি? বিনয়ের জবাব, 'সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন ও সবার সঙ্গে কাজের মানসিকতা দ্বারা আমি উদবুদ্ধ। এখন ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের দেশ গড়ে তোলাই লক্ষ্য। মমতাই দার্জিলিংয়েরউন্নতি করবেন। বিজেপি তিনবার নতুন রাজ্যের লালিপপ দেখিয়ে জিতেছে। বিজেপির নানা কাজের চরম প্রতিবাদ প্রয়োজন।'
কেন ছাড়লেন গুরুংয়ের মোর্চা? বিনয় তামাং বলেন, 'গুরুং তো আগেই তৃণমূলকে সমর্থন করার কথা বলেছিল। আমি সেই দলে যোগ দিলাম। এবার আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।'
পাহাড়ে সম্ভবত আগামী বছরই জিটিএ নির্বাচন। তার আগে সেখানে সংগঠনকে সক্রিয় করতে তৎপর ঘাস-ফুল শিবির। এই প্রেক্ষাপটে বিনয় তামাং ও রোহিত শর্মার তৃণমূলে যোগদান নিঃসন্দেহে শাসক দলের মাস্টার স্ট্রোক। অন্যদিকে, বিমল গুরুং পাহাড়ের রাজীনীতিতে সক্রিয় হতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বিনয় তামাং। কিন্তু সম্প্রতি যুযুধান এই দু'জনের সাক্ষাতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা শক্তিশালী হওয়ার আভাস মিলছিল। এই দুই নেতার দল ত্যাগে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সংগঠনে কিছুটা হলেও ধাক্কা দেওয়া গেল বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
বিনয় তামাং, রোহিত শর্মার তৃণমূলে যোগদান প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'পাহাড় বিজেপির ছিল, আগামিতেও থাকবে। লোকসভা, বিধানসভাতেই তা প্রমাণিত। পাহাড়ের রাজনীতিতে ওই দু'জনের কোনও প্রভাব ছিল না।'
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন