বুধবার আধা সেনা আর জেলা শাসকের চোখের সামনে থেকেই ‘উধাও’ হয়েছিলেন অনুব্রত মন্ডল। প্রায় ঘণ্টা তিনেক কষ্টের পর অবশেষে তারাপীঠ মন্দিরে কেষ্টকে পেয়েছিল কমিশন। আর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ভোটের দিন সকাল থেকেই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি ছিলেন নজরবন্দি অনুব্রত। প্রতি ভোটের মতোই এবারও ভোট শুরুর প্রথম পাঁচ ঘণ্টা দেখা মেলেনি বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতির। বেলা বাড়তেই ভোটে দিতে মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি।
দলীয় কর্মীদের বাইকের পিছনে বসে যান বুথে। কিন্তু আর ঝুঁকি নেয়নি কমিশন। তাঁকে নজরবন্দির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা শাসক কয়েকজন আধা সেনা নিয়ে অনুব্রতের পিছনে ধাওয়া করেন। তবে, বাহিনী ও কমিশনকে সমস্যায় ফেলেননি কেষ্ট।
এদিন তাঁর পরনে ছিল হলুদ পাঞ্জাবি। অনুব্রতর উপর নজর রাখছিলেন নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ করা জেলাশাসক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বাইকে চড়েই বোলপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভগবত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন তিনি। তার পর ভোট দিয়ে সোজা চলে যান বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রতিবার ভোট পরিচালনা করেন তৃণমূল নেত্রীর স্নেহের কেষ্ট।
এদিকে, অষ্টম তথা শেষ দফার ভোটে সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে মানিকতলা এবং বেলেঘাটা। মানিকতলার রামকৃ্ষ্ণ সমাধি এলাকায় তুমুল বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। তাঁর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, রক্তাক্ত হল বেলাঘাটা বিধানসভার ট্য়াংরা সেকেন্ড লেনও। ইঁট, রড, পাথর নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূল-বিজেপি।
মানিকতলার রামকৃ্ষ্ণ সমাধি এলাকায় নিউ ন্যাশনাল হাই স্কুলের বুথে অশান্তি শুরু হয়। এরপরই অশান্তির খবর পেয়ে বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ফুলবাগান সংলগ্ন ২৪০ ও ২৪১ নম্বর বুথ এলাকায় যেতেই উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে গেলে তাঁদের সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এরপরই কল্যাণ চৌবেকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মানিকতালর বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলরের ছেলে মারধর করেছে তাঁকে। এমনকী লাথিও মারা হয়েছে তাঁর গাড়িতে। ধস্তাধস্তির জেরে ছিঁড়ে যায় পুলিশের উর্দি।
তৃণমূলের অভিযোগ,সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট চলছিল ওই এলাকায়। বিজেপি প্রার্থী এলাকায় গিয়ে উত্তেজনা তৈরি করে। অশান্তির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী সাধন পাণ্ডে। তার সামনেও চলে তুমুল অশান্তি। সাধন পাণ্ডের অভিযোগ, তৃণমূলের মহিলা কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। গলা টিপে দেওয়া হয়েছে।
মানিকলতায় যখ এই পরিস্থিতি তখন ধুন্ধুমার বাঁধে বেলেঘাটাতেও। ট্যাংরার সেকেন্ড লেন এলাকায় সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি। বাঁশ-লাঠি-হকি স্টিক নিয়ে চলে তাণ্ডব। দু’পক্ষের মধ্যে পাথর ছোড়়াছুড়ি হয়। একে অপরকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বোতল-লোহার রড। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন। একজন বিজেপি সমর্থককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁর মুখ ফেটে যায়।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ গেলে তাদেরও ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয়রা। লাঠি উঁচিয়ে জমায়েত ভাঙে পুলিশ।