Advertisment

"টিকাকরণ শেষ হলেই নাগরিকত্ব", ঠাকুরনগরে দাঁড়িয়ে মতুয়াদের আশ্বাস অমিত শাহের

'আমরা সেই লোক যাঁরা কথা যা বলি, কাজ সেটাই করি। মতুয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি কথা দিয়ে গেলাম টিকাকরণের কাজ শেষ হলেই আমরা নাগরিকত্ব আইন লাগু করবো।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ঠাকুরনগরের মঞ্চে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং অমিত শাহ। ছবি: পার্থ পাল

ঠিক যে প্রতিশ্রুতির জন্য প্রায় দশদিন অপেক্ষা করেছিল ঠাকুর নগর। এদিন সেই মতুয়া ভূমিতে দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, 'আমরা সেই লোক যাঁরা কথা যা বলি, কাজ সেটাই করি। মতুয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি কথা দিয়ে গেলাম টিকাকরণের কাজ শেষ হলেই আমরা নাগরিকত্ব আইন লাগু করবো।'

Advertisment

মতুয়াদের ক্ষোভ প্রশমনে সক্রিয় হয়ে তাঁর দাবি, ২০১৯ সালে আমরা নাগরিকত্ব আইন এনেছি। অনুপ্রবেশ রুখতে আর শরণার্থীদের সম্মান দিতে। করোনার জন্য আইন প্রণয়নের কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে দিদি বলেছেন এই আইন লাগু করতে দেবেন না। তিনি দেখে নেবেন কীভাবে আইন লাগু হয়! দিদির অনুপ্রবেশ রোখার ক্ষমতা নেই। যেটা ভারতীয় জনতা পার্টির আছে। ৭০ বছর ধরে মতুয়া আর নমঃশূদ্ররা নাগরিকত্ব পায়নি। এটা ভারতীয় সংসদের আইন আপনি কীভাবে আটকাবেন?'

বিরোধীদের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, 'বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল এদেশের সংখ্যালঘু ভাইবোনেদের ভুল বোঝাচ্ছে নাগরিকত্ব আইন লাগু হলে তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল হবে। সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রতি তাঁর বার্তা, 'সিএএ-তে কোনও সংখ্যালঘু ভাইবোনের নাগরিকত্ব যাবে না। আমি কথা দিচ্ছি। তাই যাঁরা মিথ্যা রটাচ্ছে, তাঁদের ফাঁদে পা দেবেন না।' এদিন বনগাঁর সভায় মতুয়া উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে। এদিন জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ঠাকুরনগরের রেলস্টেশনের নাম শ্রীধাম ঠাকুরনগর রেল স্টেশন করা হবে। এদিন ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, 'কর্মসংস্থান থেকে বিনিয়োগ, এসব মমতা সরকার করতে পারেনি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সেটাই করবে।' এদিন ঠাকুরনগরের সভায় হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর আর বড় মা-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্যের ঝাঁঝ বাড়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রসঙ্গে টানেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পথের পাঁচালি রচনার। তাঁর অভিযোগ বামেদের সময় থেকে বাংলায় হিংসার পরিবেশ। তৃণমূল আমলে সেই পরিবেশ পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় এলে হিংসা সরিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।

তাঁর শ্লেষ, 'আমার ঠাকুর নগরের সফর স্থগিত হওয়াতে দিদি খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু দিদি খুশির কোনও কারণ নেই আগামী মে মাস পর্যন্ত একাধিকবার বাংলায় আসবো, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার হার নিশ্চিত হচ্ছে।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, 'এদিন ঠাকুরনগরে জমায়েত বলে দিচ্ছে আগামি দিনে রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। মতুয়াদের যথাযথ সম্মান দেবে বিজেপি।' এভাবেই চ্যালেঞ্জ ছোড়েন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর প্রশংসায় অমিত শাহ বলেছেন, 'প্রতি গরিবকে বিদ্যুৎ, ঘর, এলপিজি গ্যাস, ৫ লক্ষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় এনেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। গত ছ'বছর এই কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।' আক্রমণের সুর চড়িয়ে মমতার প্রতি তাঁর বার্তা, "আপনি কতদিন কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলো রাজ্যে আটকাবেন? আপনার উল্টো গুণতি শুরু হয়েছে। হার আপনার নিশ্চিত। আর বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে রাজ্যে আয়ুষ্মান প্রকল্প চালু হবে।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আক্রমণ, 'মা-মাটি-মানুষের স্লোগান তুলে ক্ষমতায় এসে এখন মানুষের দুর্গতি বাড়িয়েছেন মমতা দিদি।'এদিন বনগাঁর সভা থেকেও ডবল ইঞ্জিন সরকারের  স্লোগান তোলেন অমিত শাহ। এই ডবল ইঞ্জিন সরকার পাঁচ বছরে বাংলাকে সোনার বাংলায় তৈরি করবে। এদিন দাবি করেন অমিত শাহ। তাঁর আবেদন, 'আপনারা বিজেপিকে জেতান,  আমরা সোনার বাংলা গড়বো।'

এটা ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার, অনুপ্রবেশকারীদের আটকাবে আর শরণার্থীদের সম্মান দেবে। ঠাকুরনগরে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। গত মাসের ৩১ তারিখ ঠাকুরনগরে সভার সূচি ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। কিন্তু দিল্লি বিস্ফোরণের দায় সেই সূচি স্থগিত হয়। তখনই তড়িঘড়ি রাজ্য বিজেপি ঘোষণা করে ঠাকুরনগরের সভামঞ্চ না খুলতে। ফেব্রুয়ারি মাসেই এখানে সভা করবেন অমিত শাহ। আর নাগরিকত্ব আন প্রণয়ন নিয়ে মতুয়াদের দীর্ঘদিনের প্রশ্নের জবাব দেবেন তিনি। চেষ্টা করবেন ক্ষোভ প্রশমনের। আর বৃহস্পতিবার রাজ্য সফরে এসে সেই কাজটাই করলেন অমিত শাহ। ঠিক কবে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন, নিশ্চিত করে দিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দেখার এই প্রতিশ্রুতিতে চিড়ে ভেজে কিনা? আদৌ প্রশমিত হয় কিনা বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর-সহ অন্যদের ক্ষোভ!

amit shah caa Matua Thakurnagar
Advertisment