মনোনয়ন পত্র জমার দিন নন্দীগ্রামে আহত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে তাঁকে ধাক্কা মারার অভিযোগ তোলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পায়ে গুরুতর চোট, বুকে ব্যথা। গ্রিন করিডর করে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। উডবার্ন ওয়ার্ডে হবে তাঁর চিকিৎসা। কতটা চোট গুরুতর? খতিয়ে দেখা হবে। ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, পায়ে চোটের সঙ্গে শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নন্দীগ্রামে মমতার সফর সঙ্গী সুব্রত বক্সি বলেন, 'চক্রান্ত করে এই কাজ করেছে।'
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, 'চার থেকে পাঁচজন তাঁকে ধাক্কা মেরেছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মারা হয়েছে। ঘটনার সময় এসপি-পুলিশ ছিল না।' এই ঘটনাকে নাটক বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। হার নিশ্চিত জেনে সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা মন্তব্য গেরুয়া শিবিরের।
এই ঘটনায় বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং বলেছেন, ‘উনি জেড প্লাস ক্যাটাগরি পান। উনার কনভয়ের কয়েক কিমি আগে পর্যন্ত সব ফাঁকা করে দেয়। কে ওনাকে ধাক্কা মারবে? উনি নাটক করছেন। তার মানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে উনি ব্যর্থ। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উনি মিথ্যা কথা বলছেন। হার নিশ্চিত জেনে এসব করছেন।‘ কটাক্ষ করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, ‘সিবিআই তদন্ত করে দেখুক, আসলে কী হয়েছে।‘ অধীর চৌধুরী বলেন, 'রাজনৈতিক ভণ্ডামি করছেন মুখ্যমন্ত্রী।'
এদিকে আপাতত এসএসকেএম-র উডবার্ন ওয়ার্ডে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হবে। তারপর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে রাখা হবে, না বাড়িতেই চিকিৎসা হবে। তাঁকে সম্ভবত সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন অর্থাৎ ভিভিআইপি কেবিনে ভর্তি করে চিকিৎসা চলবে। ঠিক কী হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর? জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করল কমিশন। অপরদিকে, তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, 'অশান্তি পাকানোর চেষ্টা।' মন্ত্রী তাপস রায় বলেছেন, 'ভণ্ডরাই একে ভণ্ডামি বলছেন।'
কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, "তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিরকাল মানুষের সঙ্গে মেশেন। সেই সুযোগ নিয়ে তাঁকে এইভাবে ধাক্কা মারা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে। ভালরকম চোট পেয়েছেন তিনি। স্থানীয় পুলিশের যে যে ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল সেগুলি সেভাবে নজরে পড়েনি। ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ইঙ্গিতবাহী। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। তাঁর যথাযথ নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি। যাঁরা নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ভীত এবং উদ্বিগ্ন তারাই এই ধরনের উদ্বেগজনক, ভারসাম্যহীন, অপরিণত ঘটনা ঘটিয়েছে।" ঠিক কী হয়েছিল?
মনোনয়ন জমা দিয়ে বুধবার নন্দীগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিচ্ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁকে ঘিরে এদিন মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামের ভাড়া বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। সেই সময়ই আহত হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, ভিড়ের মধ্যে নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় ধাক্কা-ধাক্কিতে মুখ থুবড়ে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পায়ে প্রচণ্ড চোট লেগেছে। গাড়িতে বসে কথা বলতে বলতেই তাঁর চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ ধরা পড়েছে। চোট এতটাই গুরুতর যে মুখ্যমন্ত্রীকে তড়িঘড়ি কলকাতায় আনা হচ্ছে। জানা গিয়েছে এসএসকেএম-এ তাঁর চিকিৎসা হবে। প্রস্তুত রয়েছেন হার্ট-মেডিসিন-অর্থপেডিক সহ নানা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। রয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব। লিফটে দ্রুত মুখ্যমন্ত্রীকে সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাখা হয়েছে হুইল চেয়ার ও ট্রলি। পাঁচ চিকিৎসককে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ।