কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল অধীর চৌধুরীকে। হাইকমান্ড সূত্রে খবর, আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে। তাই দায়িত্ব লাঘবে এই সিদ্ধান্ত। তাঁর জায়গায় বসানো হয়েছে লুধিয়ানার সাংসদ রবনীত সিং বিট্টুকে। এখন তিনি সংসদের নিম্নকক্ষে দলের মুখ্য সচেতক। লোকসভার স্পিকারের দফতরকে চিঠি দিয়ে ওই পরিবর্তনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। সেই অনুরোধ মেনে নেওয়া হয়েছে। বাজেট অধিবেশনের বাকি দিনগুলিতে অধীরের দায়িত্ব সামলাবেন বিট্টু।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, একই ভাবে অসমের ভোটের কারণে লোকসভার উপ দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সাংসদ গৌরব গগৈকে। লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের দায়িত্ব সামলান মোট পাঁচজন। অধীর, গৌরব, কে সুরেশ (কেরল), মানিক টেগোর (তামিলনাড়ু) এবং বিট্টু। বিট্টু ছাড়া চারজনেই তাঁদের রাজ্যের ভোট নিয়ে ব্যস্ত। তাই বিট্টুকে লোকসভা দলনেতার গুরুদায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, বাংলার ভোট মিটে গেলে অধীরকে আবার ওই পদে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার একটি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা ঘটেছে। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনায় প্রদেশ সভাপতি অধীর যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সায় নেই। এমন বার্তা গিয়েছে বহরমপুরের সাংসদের কানে। প্রসঙ্গত, বুধবার নন্দীগ্রামের ওই ঘটনার পর অধীর বলেছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাটক করছেন!’
বৃহস্পতিবার ওই বিষয়ে এআইসিসি-র মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেন, ‘প্রদেশ সভাপতি মমতা সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। উনি হয়তো স্থানীয় কোনও সূত্রে খবর পেয়ে ওই মন্তব্য করেছেন। আমি এবং দল তাঁর ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করছি।’ কিন্তু কংগ্রেস সূত্রে খবর, মমতা বরাবরই গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। এমনকি, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর প্রিয় পাত্রী। তাছাড়া বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সমীহ করে চলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও। তাই খানিকটা মমতার আঘাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে গান্ধী পরিবারের অসন্তোষের বলি হলেন অধীর চৌধুরী। এমনটাই সুত্রের খবর।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুর লোকসভা আসন থেকে পঞ্চম বার জয়ী হলে অধীরকে লোকসভার দলনেতা করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। জয়ী মাত্র ৫২ জন সাংসদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন অধীরই। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, রাম মন্দির নির্মাণ বিতর্ক কিংবা জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারা প্রত্যাহার করা নিয়ে আলোচনা— সবেতেই লোকসভার দলনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন অধীর। লোকসভার দলনেতার সঙ্গেই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন অধীর। সেই পদে অবশ্য তিনি এখনও রয়েছেন।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, গোয়া, উত্তরাখণ্ড ও পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট। এর মধ্যে একমাত্র পঞ্জাবেই পূর্ণশক্তিতে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস সরকার। ২০২২ সালের ভোটে কংগ্রেস পঞ্জাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। তাই পঞ্জাবের লুধিয়ানার তিনবারের সাংসদ রভনীতকে লোকসভার দলনেতার পদে বসানো হচ্ছে। তিনি এআইসিসি-র তরুণ মুখ হিসেবে পরিচিত। কৃষিবিল নিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পঞ্জাবে জনমত তৈরি হয়েছে। তাই বিকল্প বিরোধী হিসেবে ‘আপ’ সেখানে বড় ফ্যাক্টর হতে পারবে জেনে তাদের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরকে নিজেদের শিবিরে এনে পাল্টা চাল দিয়েছে কংগ্রেস। পিকে-কে অমরিন্দরের পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হয়েছে। তার পরেই অধীরকে সরিয়ে পঞ্জাব-তনয় রভনীতকে লোকসভার দলনেতার দায়িত্বে এনে এআইসিসি তাঁর গুরুত্ব অনেকটাই বাড়িয়ে দিল। ঘটনাচক্রে, রভনীত পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহের নাতি।