বিগত সাড়ে চার মাস কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেই। কোনও রাজনৈতিক দলের নাম প্রকাশ্যে মুখে আনেননি। বলেননি কোনও নেতা-নেত্রীর নাম। তবুও রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি তৃণমূলে থাকবেন কীনা বা অন্য দলে যোগ দেবেন কীনা তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, বাংলায় স্বাধীনতার পর থেকে কোনও রাজনীতিবিদ টানা অরাজনৈতিক কর্মসূচি করে এমন রাজনীতির আলোচনায় কখনও থাকেননি। এমনকী যে ভাবে টানা সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির থেকে রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করছেন তাও নজিরবিহীন।
২৩ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। সেখানে কোর কমিটি সহ নানা শীর্ষ কমিটিতে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সংগঠনের নয়া কাঠামোয় পর্যবেক্ষক পদ তুলে দিয়েছে তৃণমূল। একাধিক জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। এককভাবে কোনও দায়িত্ব তিনি পাননি। সেই কমিটি ঘোষণার পর থেকে তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী রাজনৈতিক মঞ্চ, দলের পতাকা ছেড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে না জনগণমন অধিনায়িকা।
আরও পড়ুন, মেসেজ ফাঁস-অবিশ্বাসের বাতাবরণ, নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ইঙ্গিত?
পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ার সঙ্গে জনসমক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠে "দাদার অনুগামীরা''। জেলায় জেলায় শুভেন্দুর সমর্থনে পোস্টার পড়তে শুরু করে। লকডাউনে ত্রাণ বিলি করেছেন নিজের অনুগামীদের দিয়ে। রান্না খাবার বণ্টন করিয়েছেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের মাধ্যমে। সেই শুরু, তারপর দুর্গাপুজো, কালীপুজোর উদ্বোধন। একাধিক বিজয়া সম্মেলনীতে হাজির থেকেছেন। নন্দীগ্রাম দিবসে ছিলেন তেখালিতে। শহিদ জওয়ানদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছেন। নৌকাডুবিতে মৃতের পরিবারদেরও আর্থিক সাহায্য করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মরণসভায় অংশ নিয়েছেন। এমন একাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির থেকেছেন। বৃহস্পতিবার ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম দিনে তমলুকে, গড়বেতায় সভা। এভাবে একের পর এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চলেছেন তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ না করেও তিনি এখন বঙ্গ রাজনীতির শিরোনামে। নিজের দল ছাড়াও তাঁকে নিয়ে আলোচনায় বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম।
দেশের পতাকা নিয়ে পদযাত্রা করছেন। তাঁর অনুগামীরা হলুদ পতাকা নিয়ে মোটর সাইকেল র্যালি করছেন। সুদীর্ঘ সাদা পতাকায় "আমরা দাদার অনুগামী" বলে রাস্তা ঢেকে ফেলছেন অনুগামীরা। রাজনীতির ছিঁটে-ফোটা ছোঁয়াও থাকছে না নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়কের কোনও কর্মসূচিতে। তবে তাঁর বক্তব্যে নানা ইঙ্গিত দিয়েছেন। চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ছেন। নাম না করে কটাক্ষও করছেন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, তাঁর বক্তব্যের ইঙ্গিতে শুভেন্দু সব রাস্তাই খোলা রেখেছেন।
সাড়ে চার মাস ধরে সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসংযোগ বজায় রেখে যে ভাবে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করেছেন শুভেন্দু তা একেবারেই বিরল। উদ্দেশ্য বা ফল যাই হোক শুভেন্দুকে নিয়ে একাধিক বৈঠক করতে হয়েছে তৃণমূলকে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর বাংলার রাজনীতিতে তিনিই যে জননেতা, নিজের সেই জনপ্রিয়তাও পরোখ করে নিচ্ছেন শুভেন্দু।
রাজনৈতিক মহলের মতে, অজয় মুখোপাধ্যায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমেন মিত্রের মতো রাজনীতিবিদরাও এভাবে সামাজিক কর্মসূচিকে হাতিয়ার করে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার কথা ভাবেননি। রাজনীতির অন্য ধারার সূত্রপাত করেছেন শিশিরপুত্র শুভেন্দু, তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন