ধর্ম বা জাতের ভিত্তিতে কখনও ভোট চাওয়া যায় না। ভোটের জন্য মন্দির বা মসজিদে আবেদন করা যায় না। নির্বাচনের রুলবুক উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীকে নোটিশ পাঠাল নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি তারকেশ্বরে ভোট প্রচারে মুসলমানদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠান নোটিশে এই ‘সাম্প্রদায়িক’ লাইনের তীব্র বিরোধিতা করেছে কমিশন। আগামি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মমতার জবাবদিহি তলব করা হয়েছে। নচেৎ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন বার্তাও পাঠিয়েছে কমিশন।
তারকেশ্বরে সভায় সেই আবেদনের পর মমতার বিরুদ্ধে দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে নালিশ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি। সেই নালিশ খতিয়ে দেখেই এদিন নোটিশ পাঠায় কমিশন। সেই নোটিশে উল্লেখ, ‘তারকেশ্বরে সভায় আপনার মন্তব্য কমিশন খতিয়ে দেখেছে। স্পহস্ত হয়েছে আপনি আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাছাড়া জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ (৩) ধারা এবং ৩ (এ) ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।‘
তাঁর এহেন মন্তব্যের বিরোধিতা মঙ্গলবার করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কোচবিহারের সভা থেকে তিনি বলেছেন, ‘আচ্ছা আমি যদি বলতাম সব হিন্দু একজোট হন, তাহলে কী হত? কমিশন ৭-১০ দিনের জন্য আমার ওপর নিসেধাজ্ঞা আরোপ করত। আমাকে প্রচারে যেতে দেওয়া হত না। সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর হত। আমার চুল ছিঁড়ে নিত।‘
এদিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের ঘটনার রিপোর্টও তলব করল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের সিইও দফতর বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে কোচবিহারের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। এমনটাই কমিশন সুত্রে খবর। বিজেপি-র তরফেও এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে সিইও দফতরে অভিযোগ জানানো হয়। অবশ্য তার আগেই কমিশনের তরফে এ বিষয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল।
বুধবার দুপুরে কোচবিহারের জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশেই সিআরপিএফের একাংশ বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সঙ্গে ভোটদাতা এবং তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে মমতার পরামর্শ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘গন্ডগোল’ করার চেষ্টা করলে মহিলারা যেন তাদের ঘেরাও করেন। তাঁর বক্তব্য, “এক দল ঘেরাও করে রাখবেন। এক দল ভোট দিতে যাবেন। ভোট নষ্ট করবেন না। আপনি যদি শুধু ঘেরাও করে রাখেন, তা হলে ভাববে ভালই তো ভোটটা পড়ল না। এটাই বিজেপি-র চাল।”
নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়ে বিজেপি প্রতিনিধি দলের সদস্য শিশির বাজোরিয়া বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বললাম, আপনারা যদি ওঁকে (মমতা) ‘সেন্সর’ না করেন, এই জিনিসটা আরও বাড়বে।’’ তাঁর অভিযোগ পরের দফার নির্বাচনগুলিতে মমতা নিজের হার নিশ্চিত বলে বুঝতে পারবেন এবং যে কোনও ভাবে ‘বড় অঘটন’ ঘটাবেন।