বাংলা তথা জাতীয় রাজনীতিতে বড় খবর। বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েনের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগদান করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তৃণমূলে যোগদানের পর এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে বাবুল সুপ্রিয় বলেন, "শেষ চারদিনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে কোনও প্রতিহিংসা নেই। রাজনীতি ছাড়ার কথা মন থেকেই বলেছিলাম। নিজের সিদ্ধান্ত বদল করার জন্য আমি গর্বিত। রাজনীতি ছাড়ব বলার পর ৭ বছরের পরিশ্রম ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। বাংলার জন্য কাজ করতেই রাজনীতিতে ফেরা। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করব। বিজেপির তরফ থেকে প্রচুর কটাক্ষ আসবে, আমি জানি। কিন্তু আমার সামনে যে বড় সুযোগ এসেছে তা আমি এবার ছাড়ব না। যদি আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দল যা বলবে তাই করব। মমতা দিদির অন্য কারওর প্রচারের দরকার পড়ে না। তবে নির্দেশ পেলে ভবানীপুরে মমতা দিদির জন্য প্রচার করব।"
আরও পড়ুন- ‘দলের বিরুদ্ধে বড় প্রতিশোধ’ বাবুল খুইয়ে দাবি বঙ্গ বিজেপির
কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব হারানোর পর রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে জানিয়েছিলেন, অন্য কোনও দলে যোগ দেবেন না তিনি। কিন্তু এদিন সবাইকে অবাক করে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন আসানসোলের দুবারের সাংসদ। সেইসঙ্গে ভবানীপুর উপনির্বাচনে বড় ধাক্কা খেল বিজেপি। কারণ বিজেপির হয়ে প্রচারে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ভবানীপুরে। তারকা প্রচারক হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করে হাইকম্যান্ড।
সেই নির্দেশ অমান্য করেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান বাবুল সুপ্রিয়র। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুল সুপ্রিয়কে স্বাগত জানিয়েছেন টুইট করে। প্রসঙ্গত, ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপি যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের বিজেপি যাত্রা শুরু কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়র আইনজীবী হিসাবেই। বাবুলের খুব প্রিয় ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। তাই ভবানীপুরে তারকা প্রচারক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবুলকে। এবার নতুন দলে যোগ দিয়ে হয়তো ভবানীপুরেই মমতার হয়ে প্রচারে দেখা যেতে পারে তাঁকে। এমনটাই তৃণমূল সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন চেনা মাঠেই ‘দিদি’র নজিরবিহীন প্রচার পরিকল্পনা, আগামী সপ্তাহে ভবানীপুরে ম্যারাথন সভা মমতার
অনেক দিন ধরেই বিজেপির থেকে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব অনেকদিনের। বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর তা আরও প্রকট হয়। তারপর গত মাসে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় তাঁকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য করা হয়। রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো ছিল, টালিগঞ্জে বিরাট ব্যবধানে হারের কারণেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। তার পরই একদিন নিজের ফেসবুক পোস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, রাজনীতি ছাড়ছেন তিনি। তবে সাংসদ হিসাবে নিজের মেয়াদ শেষ করবেন। কিন্তু তৃণমূল-কংগ্রেস বা বাম শিবিরে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই তা স্পষ্ট করেছিলেন। তবে শনিবার জল্পনার অবসান করে তৃণমূলে যোগ দিলেন বাবুল। যা নিয়ে রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতি তোলপাড়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন