মৃত্যু দিয়েই শনিবারের ভোটের সকাল শুরু হয়েছিল কোচবিহারে। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ল মৃতের সংখ্যা। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হল ৪ জনের। তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের কর্মী, এমন দাবি করেছে শাসক দল। শুধু এখানেই শেষ নয় সিআইএসএফ-এর গুলিতে আরও ৪ ব্যক্তি আহত হয়েছে। এমনটাই কমিশন সুত্রে খবর।
শীতলকুচির জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে এই ঘটনা ঘটেছে। গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, সিআইএসএফ জওয়ানরা বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে। রাতভর মদ-মাংস খেয়ে সকালে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করানোর ভার যাদের কাঁধে, তাঁদের নির্বিচারে গুলি চালানোর অধিকার কে দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জোড়াফুল শিবির।
স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘দলে দলে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন মানুষ। সেই সময় বিনা প্ররোচনায় গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী।’ বুথের ভিতরে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল, তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। এই ঘটনার রিপোর্ট কমিশন দফতরে জমা দিয়েছে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সেই রিপোর্টে গুলি চালনার কথা স্বীকার করা হয়েছে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ, বুথের বাইরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। সেই সংঘর্ষ থামাতে গেলে সিএপিএফ-এর ওপর হামলা হয়। তখনই আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছে বাহিনী।
অন্য দিকে, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া নিশীথ প্রামামিক গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে দায়ী করেছেন। তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জন্যই এই ঘটনা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে মাথাভাঙা-সহ অন্য ভোট প্রচারে যে ভাবে লাগাতার উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার জন্য মানুষ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তাতেই গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে সিআইএসএফ। তৃণমূল কংগ্রেস চায় না শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হোক। তাই অশান্তিতে উস্কানি দিয়েছে।’’
এই ঘটনায় তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা ন্যক্কারজনক। আমরা কমিশন-সহ বাহিনীর ভূমিকার তীব্র নিন্দা করছি।‘ স্থানীয়দের মন্তব্য, ‘শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছিল। হঠাৎ করে বুথের বাইরে জমায়েত বাড়তে থাকায় সেই জমায়েত হঠাতেই গুলি চালিয়েছে বাহিনী।‘
গোটা ঘটনায় ‘অ্যাকশন টেকেন’ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, সিআরপিএফ নয়, গুলি চালিয়েছে সিআইএসএফ।
শনিবার সকালে চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় শীতলকুচিতে সংঘর্ষ বেধেছে তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে। সকালে পাঠানটুলি শালবাড়ির ২৮৫ বুথে ভোট দিতে গিয়ে আনন্দ বর্মণ নামের এক ১৮ বছরের কিশোরের মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারের লোকজন নিজেদের বিজেপি সমর্থক বলে দাবি করলেও, আনন্দ কাদের পক্ষে, তা নিয়েও রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়। এবারই প্রথম ভোট দিতে ওই বুথে গিয়েছিলেন আনন্দ।