কমিশন নিযুক্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের রিপোর্টে বয়াল কাণ্ডে হাসি চওড়া তৃণমূলের। দিল্লিতে পাঠানো রিপোর্টে দুবে উল্লেখ করেছেন, সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বয়ালের ৭ নম্বর বুথে ভোটদান ব্যাহত হয়নি। পয়লা এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণে গোটা দেশের নজর ছিল নন্দীগ্রামে। বঙ্গ ভোটের এপিসেন্টার ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এই বিধানসভা কেন্দ্র। কারণ যুযুধান দুই প্রতিপক্ষের একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, অপরজন একদা মমতা ঘনিষ্ঠ শুভেন্দু অধিকারী। ফলে সেদিন সকাল থেকেই নন্দীগ্রামে উত্তেজনা ছিল চরমে। বিশেষ নজর কেড়েছিল সেই বিধানসভার বয়ালের ৭ নম্বর বুথ। ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রায় দু’ঘণ্টা কার্যত অবস্থান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উপস্থিতিতেই বুথের বাইরে লাঠি, বাঁশ, অস্ত্র নিয়ে জমায়েত করেছিলেন দুই দলের কর্মী-সমর্থকরা।
এরপরেই আইপিএস নগেন্দ্র ত্রিপাঠির নেতৃত্বে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনে জেলা প্রশাসন। এরপর বিকেলের দিকে সেই বুথ পরিদর্শন গিয়ে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। একটা বুথে দু’ঘণ্টা কী করছিলেন তৃণমূল প্রার্থী? সেই প্রশ্ন তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শুভেন্দু। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছিল নির্বাচন কমিশন।
সেদিন সকাল থেকে শুভেন্দু অধিকারী বুথে বুথে ঘুরলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘর থেকেই গোটা বিষয়টিতে নজর রাখছিলেন। নানা জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত অভিযোগ আসলেও, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে বয়াল থেকেই।বারংবার অভিযোগ জানানো হয় ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি।
শেষমেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুপুর ১ টা ১৫ নাগাদ রেয়াপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান বয়াল সাত নম্বর বুথে। ওই জায়গা থেকেই যোগাযোগ করেন রাজ্যপালের সঙ্গে, ওখান থেকেই রাইটিং প্যাডে চিঠি লেখেন কমিশনে। আদালতে যাওয়ার কথাও শোনা যায় তাঁর মুখে।
আজ সেই রিপোর্টে বিবেক দুবে জানান, মমতা যখন বয়াল ৭ নং বুথে পৌঁছন বাইরে ততক্ষণে যুযুধান দুইপক্ষ (বিজেপি ও তৃণমূল) রীতিমতে একে অন্যের বিরুদ্ধে ফুঁসছে। এই অবস্থায় নিরাপত্তার খাতিরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেখান থেকে বের করা অসুবিধেজনক ছিল।
পাশাপাশি তিনি ওই রিপোর্টে লিখেছেন, ওই এলাকায় ভোট পরিচালনায় খুব বড় কোনও সমস্যা হয়নি। আইপিএস নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর ভূমিকার কথাও উল্লেখ রয়েছে ওই রিপোর্টে। প্রসঙ্গত কালই শিরোনামে আসেন আইপিএস ত্রিপাঠী। তাঁর উপর বাকি সময়ে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনার ভার ন্যাস্ত করেই বয়াল ছেড়ে সোনাচূড়া রওনা হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অপরদিকে, ভোটে বেআইনি লেনদেন রুখতে আরও কড়া হল কমিশন। কমিশন অনুমোদিত মুল্যের বেশি খরচ কখনই নয়। ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্যের জেলা শাসকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন আয়ব্যয় সংক্রান্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক। পাশাপাশি আরও বেশি করে নাকা তল্লাশি এবং কোনও গাড়ি নিয়ে সন্দেহ হলেই তল্লাশি চালানোর নির্দেশ জেলা শাসকদের দিলেন ওই পর্যবেক্ষক।