আগামি ৩-৪ দিনের মধ্যেই ভোটের প্রচারে ফিরছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিডিও মাধ্যমে তৃণমূল তথা কর্মীদের উদ্দেশে এই বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেককে শান্ত-সংযত থাকতে নির্দেশ দেন তিনি। এদিন শয্যাশায়ী অবস্থায় একটি ভিডিও বার্তা পাঠান তিনি। সেই বার্তায় খারিজ করা হয়েছে ষড়যন্ত্রের তত্ব। দুর্ঘটনার ফলেই তাঁর পায়ে চোট। সেই বার্তায় এমনটাই উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তিনি বলেছেন, ‘আমি হাত জোর করে সকলের অভ্যর্থনা নিতে নিতে এগোচ্ছিলাম, সেই সময় কোনও কারণে গাড়িটা চেপে যায় পায়ে। তাতেই খুব চোট লাগে। কাল সত্যি ব্যথা লেগেছে, বুকেও যন্ত্রণা হচ্ছিল। সেই সময় আমার সঙ্গে যা ওষুধ ছিল সেটা দিয়ে সামাল দিয়েছি। তারপর আমরা কলকাতা চলে আসি। আমি আগামি কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারে ফিরব। পায়ে চোটের জন্য হয়তো হুইল চেয়ার লাগতে পারে। আপনারা শান্ত ও সংযত থাকুন।‘
দেখুন সেই ভিডিও:
এদিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, ১৩ মার্চ থেকে আগামি দু’সপ্তাহ জঙ্গলমহল জুড়ে প্রায় দু’ডজন জনসভার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি চোট পেয়ে যাওয়ায় কিছুটা বদলে যেতে পারে কর্মসূচি। তবে আগামি ৩-৪ দিনের মধ্যেই ফের প্রচারে ফিরবেন তৃণমূল নেত্রী। এব্যাপারে এদিন কালীঘাটে বৈঠকে বসছে দলের নির্বাচনী কমিটি।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও নিজেদের অবস্থানে অনড় তৃণমূল কংগ্রেস এই মর্মে অভিযোগ জানাল নির্বাচন কমিশনে। এদিন কমিশনে গিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলার চক্রান্তের অভিযোগ জানান। পার্থবাবুর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলা হতে পারে এর পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। বিজেপি নেতাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট ও মন্তব্য দেখেই এটা বোঝা যাচ্ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তাঁর।
এদিন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানানোর পর পার্থবাবু একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, “এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। অনেক বিজেপি নেতার কথায়, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এর পূর্বাভাস পাওয়া যায়। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা করেনি কমিশন। তাঁর প্রশ্ন, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হওয়ার পরই কেন ডিজিপি বীরেন্দ্রকে সরানো হল, এডিজিকেও কেন অপসারণ করা হল। যেভাবে মমতার উপর হামলা হয়েছে তার দায় কার?”
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর আরও অভিযোগ, কমিশন দায়িত্ব নিয়ে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করেছে। দায়িত্ববান পুলিশ আধিকারিকদের সরানো হয়েছে, তাঁদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। বিপদের সময়ে পুলিশকে দূরে সরিয়ে রাখা, এটা কার স্বার্থে? এদিকে, গতকালের ঘটনায় নন্দীগ্রাম থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি আবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্টও বটে। অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলার ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি করে নির্বাচন কমিশনে যান বিজেপির প্রতিনিধিরা। তাঁরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আনার দাবি জানান।
এদিন নির্বাচন কমিশনে যান বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া ও সব্যসাচী দত্ত। সব্যসাচী বলেন, ‘‘ঘটনার সময় তোলা ভিডিও ক্লিপিং অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক। যে সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে, তখন অনেক সেখানে সংবাদমাধ্যম উপস্থিত ছিল। তাঁর নিজের লোকেরাও ছিলেন। তাঁদের ও সংবাদমাধ্যমের তোলা সমস্ত ফুটেজ যেন প্রকাশ করা হয়। না হলে গোটা ঘটনার দায় গিয়ে পড়ে নির্বাচন কমিশনের উপর। যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী সুরক্ষিত নন, সেখানে বাকি নাগরিকদের কী অবস্থা হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক বয়স হয়েছে। তাঁর নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। আমরা চাই তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’’