মুখ্যমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল ত্যাগী বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের সম্পর্কের ফাটল স্পষ্ট হয়েছিল। এরপর কেলাস-মুকুল তড়িঘড়ি বৈঠক করলে ক্ষোভ কিছুটা প্রশমন হয়েছিল। এমনকী রাজ্যের পাঠানো নিরাপত্তাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে অমিত শাহের সভায় ঢুকতে না পারায় অসন্তোষ কয়েকগুণ বেড়েছে। আর তারপরই 'বেসুরো' বিজেপিতে ঠাই নেওয়া বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। শুক্রবার বনগাঁর সাংসদ শান্তনুর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিশ্বজিৎ। দলীয় সাংসদ 'মতুয়াদের ব্ল্যাকমেল করছেন' বলে অভিযোগ বিধায়কের।
তাহলে কী চলতি দলবদলের বিপরীত স্রোতে হেঁটে ফের পুরনো দলে ফিরছেন বিশ্বজিৎ? জল্পনা চললেও তা স্পষ্ট করেননি বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক। বলেছেন, "এখনও আমি বিজেপিতে রয়েছি। দল ও মতুয়াদের ব্ল্যাকমেলের খবর রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। পরে ফের রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়ে জানাব।" নাগরিত্ব দেওয়ার নামে মতুয়াদের নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। যার সঙ্গে বিশ্বজিতের দাবির মিল স্পষ্ট। ফলে মুখে বিধায়ক না বললেও বিজেপির বিশ্বজিতের দলবদলের ইঙ্গিত জোড়াল হচ্ছে।
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে কটাক্ষ করে বিশ্বজিৎ দাস বলেছেন, "এতদিন যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁরা সবাই নাগরিক। শান্তনু ঠাকুর মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। দলকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। নিজের স্বার্থ ছাড়া মতুয়াদের কথা ভাবছেন না। ভ্যাকসিনেশন শেষ হতে প্রায় ৫ বছর লাগবে। তাহলে কী সেদিন মতুয়ারা নাগরিকত্ব পাবেন?" মতুয়াদের ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে।"
এ বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য সাংসদের কৈফিয়ৎ চেয়েছেন বিধায়ক।
ঠাকুরনগরের সভায় বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেন, "আমি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছি। টিকাকরণ শেষ হলেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তাড়াতাড়ি আপনারা সবাই ভারতের নাগরিক হিসেবে সবকা সাথ, সবকা বিকাশে সামিল হবেন। মমতাদিদি বলেছিলেন সিএএ হতে দেব না। কিন্তু আমরা সেই লোক, যারা যা বলে তাই করে ছাড়ে। আজ এই পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছি, ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শেষ হলেই আপনাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে।"
মতুয়া বাজিতেই উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া সহ একাধিক বিধানসভা আসন জয়ের আশা করছে গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু ভোটের আগে 'মতুয়াদের ব্ল্যামেল' ইস্যুতে বিজেপির অস্বস্তি বাড়ছে। দলের অভ্যন্তরে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকট। বিশ্বজিৎ দাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, "সিএএ কবে হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি মতুয়াদের বলেছেন। এখানে আমার কিছু বলার নেই।"
বিশ্বজিতের বিস্ফোরণ সম্বন্ধে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, "ওটা মতুয়াদের অনুষ্ঠান। যাঁরা আমন্ত্রণ পেয়েছেন তাঁরাই গিয়েছেন। দলের অনেকের ইচ্ছা থাকতেই পারে যাওয়ার জন্য। তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।" দিলীপবাবু কোন্দল ধামাচাপার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু বিশ্বজিতের বিস্ফোরক মন্তব্যে আপাতত তাঁর দলবদলের জল্পনা তুঙ্গে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন