নন্দীগ্রাম ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এমনকী রাজ্যে পরিবর্তনের আগে যত ইস্যু ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নন্দীগ্রামের জমি রক্ষার আন্দোলন। সিঙ্গুর আন্দোলন এক সময় থিতিয়ে গেলে নন্দীগ্রাম ফের চাগিয়ে দেয় সেই আন্দোলনকে। এবার ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরের গোষ্ঠীকলহের ছবিও ধরা দিয়েছে সেই নন্দীগ্রামে। সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ১৩ বছর পরে তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মূল হোতা কে? কারা ছিলেন সেই আন্দোলনের কান্ডারী? এখন কেন সেই প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে ধন্দে অভিজ্ঞ মহল।
আরও পড়ুন- রাজ্যের মন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া তৃণমূল সাংসদের, ‘আগামী দিন বলবে কে মীরজাফর’
ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি প্রতিবারই ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রাম দিবসে শহিদদের স্মরণ করে। এবারের নন্দীগ্রামের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে শুধু রাজনীতির ছোঁয়া লাগেনি, বিতর্ক বেড়েছে কয়েকগুন। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্যে ধন্দ ছড়িয়েছে নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী আর কারও অবদান ছিল না সেদিনের জমি আন্দোলনে? নিজেদের তর্কাতর্কিকে ফের শিরোনামে উঠে এসেছে নন্দীগ্রাম। দলাদলি পৌঁছেছে মন্ত্রী থেকে সাংসদদের মধ্য। নাম না করেই চলেছে তোপ, পাল্টা তোপ।
তেখালির সভায় নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,'আমিও ছিলাম নন্দীগ্রামে, আরও বহু মানুষ ছিলেন সেদিনের আন্দোলনে।' অন্যদিকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নন্দীগ্রামে গিয়ে বলেছেন, আন্দোলন হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। তা নাহলে নন্দীগ্রামের আন্দোলন হত না। এই সভাতে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, কলকাতার নেতৃত্ব না থাকলে নন্দীগ্রামের আন্দোলন সফল রূপ পেত না। তবে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্ব স্থানীয়দের স্পষ্ট বক্তব্য, দলমত নির্বিশেষে নন্দীগ্রামের আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। কেউ বলছেন একার আন্দোলন নয়। পাঁশকুড়ার বিধায়ক শহিদের মা ফিরোজা বেগম তেখালি ও হাজরাকাটা দুটি সভাতেই হাজির ছিলেন। তিনি বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ আন্দোলন নিয়ে স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। এখানেও প্রশ্ন কারা স্বার্থ চরিতার্থ করছে? নন্দীগ্রামের মানুষের দাবি, এঁদের চিহ্নিত করা হোক।
আরও পড়ুন- নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে শুভেন্দু-তৃণমূলের বিভাজন উস্কালেন মুকুল
অভিজ্ঞ মহলের মতে, সব থেকে বড় প্রশ্ন নন্দীগ্রামের আন্দোলন কারা করেছে স্মরণসভায় সেই প্রশ্ন উঠছে কেন? গলার শিরা ফুলিয়ে এসব নিয়ে দাবি, পাল্টা দাবি কেন চলছে? কী এমন ঘটনা ঘটেছে ১৩ বছর পরে আন্দোলনের কান্ডারী প্রমান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নেতৃত্বের একাংশ? এবারের ১০ নভেম্বরের নন্দীগ্রামের ঘটনা রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোরালো করে দিয়েছে। নন্দীগ্রামের এই ঘটনার প্রভাব রাজ্য-রাজনীতিতে পড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যে মাটি একসময় ঘাসফুল সরকারের ভিত মজবুত করতে সাহায্য করেছিল সেখানেই চলছে আঁচর কাটা। দলের অন্তর্কলহ মিটবে কী না তা সময় বলবে, তবে ভূমি আন্দোলনের মতো নন্দীগ্রাম দিবসের এই দাগ দীর্ঘ দিন থেকে যাবে।