Advertisment

বাম-কংহীন রাজ্য বিধানসভা! ‘স্টালিন কপচিয়ে হবে না’, কামান দাগলেন তন্ময়

অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘শুধু আমি নয় গোটা রাজ্যেই দলের এই বিপর্যয়। সেটা কেন আমরা আলোচনা করে দেখব।‘

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অধীর চৌধুরি ও বিমান বসু। এক্সপ্রেস ছবি ফাইল ফটো  

বাম এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিহীন বঙ্গ বিধানসভা! শেষ কবে দেখেছে বাঙালি, তা ইতিহাসে আলোচ্য বিষয়। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পৃথক দফতর, শূন্যপদ পূরণ, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ফ্রি বিদ্যুৎ। এহেন জনহিতকর প্রতিশ্রুতি দিয়েও বঙ্গ বিধানসভা ভোটে সংযুক্ত মোর্চার বিধায়ক সংখ্যা এক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গর থেকে একমাত্র উজ্বল নক্ষত্র আইএসএফ প্রার্থী নৌশাদ সিদ্দিকি। এর বাইরে শতাংশের বিচারে বাম আর কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার শূন্য শতাংশ।

Advertisment

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ২০১৬-র আসনগুলো ধরে রাখতে পারেনি সিপিএম কিংবা কংগ্রেস। উল্লেখযোগ্য পরাজয় বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বামেদের কাছে অন্যতম নিরাপদ আসন শিলিগুড়িতেও হেরেছেন রাজ্যের একদা দাপুটে মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।

যদিও হার প্রসঙ্গে অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘শুধু আমি নয় গোটা রাজ্যেই দলের এই বিপর্যয়। সেটা কেন আমরা আলোচনা করে দেখব।‘ কিন্তু রেজাল্ট আউটের দিন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়লেও কোনও রকম সাংবাদিক সম্মেলন করেনি সংযুক্ত মোর্চা।

আম্ফান, আয়লা কিংবা ফণী, যেকোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সুন্দরবনকে ‘আগলে’ রাখা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও রায়দিঘি থেকে পরাজিত। এবার বিধানসভা নির্বাচনে বেশ কিছু তরুণ মুখকে প্রার্থী করেছিল বামেরা। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ঐশী ঘোষ, দীপ্সিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্য এবং নন্দীগ্রামে দুই হেভিওয়েটের মাঝে প্রার্থী হয়েছিলেন মিনাক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়।

সবুজ ঝড়ে এঁরা কেউ হাল ফেরাতে পারেনি লালের। উলটে চণ্ডীপুর থেকে পরাজিত হয়েছেন মহম্মদ সেলিম।

তবে শুধু বামেরা নয় এই ভোটে গড় রক্ষা করতে ব্যর্থ কংগ্রেসও। অধীর চৌধুরীর মুর্শিদাবাদে ১৫টির বেশি আসনে জিতেছে তৃণমূল। একই অবস্থা মালদার মতো একদা কংগ্রেস গড়। এই জেলায় ভোট গণনার প্রাথমিক পর্যায়ে সুজাপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের পরিচিত মুখ ইশা খান চৌধুরী এগিয়ে থাকলেও, পরের দিকে পরাজয় স্বীকার করেন। জিততে পারেননি বাঘমুন্ডির দাপুটে কংগ্রেস নেতা নেপালদেব মাহাতো। জেতেনি কংগ্রেসের জন্য নিরাপদ আসন ফারাক্কার প্রার্থীও। এবং বহরমপুরে অধীরের ডান হাত বলে পরিচিত মনোজ চক্রবর্তীও।

প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড় উত্তর দিনাজপুরে। সেখানেও খাতা খোলেনি কংগ্রেস। কংগ্রেস ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জেলাগুলোতে নিজেদের সংগঠনের জোরে কিংবা প্রছন্ন মেরুকরণের সুযোগে আসন ভাগ করে নিয়েছে তৃণমূল কিংবা বিজেপি। এমনটাই বলছে রাজনৈতিক মহল

ফলে একজিট পোলে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে সম্ভাব্য ১২% ভোটের ইঙ্গিত দেওয়া হলেও, এদিন ব্যালট খুলতে দেখা গিয়েছে প্রাপ্য ভোটের শতাংশের বিচারে দুই ডিজিটও পেরোতে পারেনি রাজ্যের একদা দুই শাসক দল সিপিএম এবং কংগ্রেস। ফলে ভোটের ফল যত স্পষ্ট হয়েছে তত কখনও দুই কিংবা তিন নম্বরে নেমে এসেছেন মোর্চা প্রার্থীরা। আর দিনের শেষে ঝুলি শূন্য বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী দল কংগ্রেস এবং ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা বামেদের। গত লোকসভা ভোটে একটাও সাংসদ না পেলেও বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৭% কিন্তু এই বিধানসভায় সেই লজ্জাকেও ছাপিয়ে গেল।

কিন্তু ব্রিগেডের সাফল্য, লকডাউনে কম্যুউনিটি কিচেনের জনপ্রিয়তা আর তরুণ মুখকে প্রার্থী  করেও এরম বেহাল দশা কেন বামদের? যার উত্তর দিয়েছেন উত্তর দমদমের পরাজিত সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য।

এদিন তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই পরাজয়ের দায় শীর্ষ নেতৃত্বের। যারা ওপর থেকে নির্দেশ চাপিয়ে দেন। লোকসভার হারের পর কেউ দায় নেয়নি। এবারেও কেউ দায় নেবে না। শুধু স্তালিন কপচাবেন না। এটা স্তালিনের যুগ নয়।‘ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে তন্ময়ের মন্তব্য, ‘আমাদের হাতে ফুটো বাটি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বক্ষণের কর্মীদের ৪-৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে কেন? ওরা কেন ২১ হাজার টাকা পাবে না?’    এভাবেই সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিনে কামান দেগেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এই সদস্য।

তবে তন্ময় ভট্টাচার্য পার্টির সিদ্ধান্তকে কাঠগড়ায় তুললেও, ভোট বিশেষজ্ঞরা এর পিছনে প্রকট মেরুকরণ দেখছে। অর্থাৎ বঙ্গ ভোট এবার অমুসলিম বনাম মুসলিম, এই দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। যার ফল তুলেছে এই রাজ্যের শাসক দল এবং রাজ্যে প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে আসা বিজেপি। আর মুসলিম ভোট সংযুক্ত মোর্চার দিকে না যাওয়ার কারণ হিসেবে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে ‘ভাইজান’ তথা আব্বাস সিদ্দিকির জোটকে কাঠগড়ায় তুলছেন পর্যবেক্ষকরা। একজন ধর্মযাজকের দলকে কেন জোটে জায়গা দেবে সিপিএম আর কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দল? এই প্রশ্ন ওঠা শুরু করেছে।

পাশাপাশি ২০১৬ সালে যেভাবে কংগ্রেসি ভোট বামেদের ভোটবাক্সে জমা পড়েনি। এবারেও তাই হয়েছে। পাশাপাশি বামেদের ভোটও পড়েনি কংগ্রেস ভোটবাক্সে। সেই ভোট হয় বিজেপিতে গিয়েছে, নয়তো তৃণমূলে গিয়েছে। ভোটপ্রাপ্তির হার বিশ্লেষণ করে এমন দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিছু কিছু জায়গায় অনেক বাম ভোটার স্থানীয় কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছেন। একই ট্রেন্ড দেখে গিয়েছে কংগ্রেস ভোটারদের ক্ষেত্রেও। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সংযুক্ত মোর্চা নামক ঘোঁট এবং প্রছন্ন মেরুকরণের মাঝে পড়ে এবার বিধানসভায় প্রতিনিধিশূন্য বাম-কংগ্রেস।‘ যার ফল বেশ চেটেপুটে খাবেই রাজ্য বিধানসভার অন্য দুই ডানপন্থী দল তৃণমূল এবং বিজেপি।  

bjp CONGRESS CPIM West Bengal Poll 2021 West Bengal Election Result 2021 Sanjukta Morcha Left Alliance
Advertisment