তৃতীয় দফার ভোটের আগে শনিবার বাংলার দুটি আসনে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার প্রথম সভাটি ছিল হুগলির হরিপালে। দ্বিতীয় সভা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর দক্ষিণে। হরিপালের সভায় সিঙ্গুর প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘সিঙ্গুরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দিদি।‘
নরেন্দ্র মোদি এদিন বলেন, ‘খেলার মাঠে কোনও খেলোয়াড় যদি আম্পায়ারের দিকে আঙুল তোলে, তাহলে বুঝতে হবে তাদের ত্রুটি আছে। আসলে তাঁর খেলা শেষ।‘ এদিনও হরিপালের সভায় মোদির গলায় ছিল সেই চেনা ‘দিদি ও দিদি’ সুর।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনার হার নিশ্চিত। আপনি স্বীকার করুন। হুগলির মানুষের আওয়াজ শুনুন। নির্বাচন খেলা নয়, গণতন্ত্র খেলা নয়, গণতন্ত্র মানুষের সেবার পথ। মানুষের উন্নতির পথ। আপনি সবই ভুলে গিয়েছেন। বাংলার লোকের সঙ্গে তাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।"
এই সভায় টেনেছেন তারকেশ্বর, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট প্রসঙ্গও। এক্সময় হুগলি শিল্পসমৃদ্ধ জেলা ছিল। এদিন এই দাবিও করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলার ভাষা, দই ও মিষ্টির এত স্বাদ। তাও দিদির মধ্যে এত তিক্ততা কেন? কটাক্ষের সুরে এই প্রশ্ন করেন নরেন্দ্র মোদী।
হরিপালের জনসভায় আর কী বললেন মোদী?
• এ বার বিজেপি সরকার। আরও বেশি করে ভোট দিতে যান। আপনাদের এই উৎসাহকেই প্রণাম করতে আমি আসি।
• তারকেশ্বরে পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য নতুন পরিকল্পনা করা হবে। হুগলি নদীর সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
• দিদি বলছেন ওঁনার সরকার সব প্রকল্প করেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে কেন্দ্রের প্রকল্প যোগ হলে তো মানুষের আরও ভাল হত।
• কেন্দ্রের কোনও প্রকল্প বাংলায় বাস্তবায়িত হতে দেননি দিদি। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলেই তাড়াতাড়ি সব সুবিধা বাংলার মানুষকে দেওয়া হবে। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে।
• বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রকল্প এই রাজ্যে কার্যকর করতে সিদ্ধান্ত হবে। পূজোর আগেই কৃষকদের অ্যাকাউন্টে কৃষি সম্মান নিধির টাকা ঢুকবে।
• ১০ বছর বাংলার যে ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। কিন্তু এ বার সুযোগ এসেছে বাংলার মানুষের সেবা করার।
• বাংলায় যখন নতুন বিজেপি সরকার আসবে সেই সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে আসব। কৃষকদের উন্নতির জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন।
• সিঙ্গুরকে ঠকিয়েছেন দিদি, কৃষিও নেই, চাকরিও নেই। রাজনীতি করে নিয়ে সিঙ্গুরের মানুষের দিকে ফিরেও তাকাননি।
• বিজেপি টাকা ছড়াচ্ছে বলে বাংলাকে অপমান করেছেন দিদি। বাংলার মানুষ কি টাকা নিয়ে জনসভায় আসে? আপনারাই বলুন। এতক্ষণ ধরে আপনারা অপেক্ষা করছেন। আপনারা কি টাকা নিয়ে এসেছেন?
• দিদি পরাজয় স্বীকার করে নিন।
• গণতন্ত্র খেলা নয়, গণতন্ত্র মানুষের উন্নয়নের পথ।
• ২ মে কী হবে তা কিছুদিন আগেই নন্দীগ্রাম দেখিয়ে দিয়েছে।
• আসল পরিবর্তনই বাংলার মানুষের লক্ষ্য। প্রথম দু’দফাতেই মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে বিজেপি বিপুল জমনত নিয়ে ক্ষমতায় আসবে।
• বোল ব্যোম তারক ব্যোম
উল্লেখ্য এদিন নরেন্দ্র মোদির সভার কিছুক্ষণ আগেই একটি সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল। সেখানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি যশবন্ত সিং বিস্ফোরক দাবি করেন। তাঁর কথায়, গত রাতেই নরেন্দ্র মোদি, জে পি নাড্ডা, অমিত শাহ বৈঠক করেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, প্রথম দু’দফায় নিরাশাজনক ফল হয়েছে। বাকি যে পর্যায় রয়ছে সেখানে মাইন্ডগেমেই ভরসা রাখবে বিজেপি। মিথ্যে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হবে। সত্য মিথ্যে জানা যাবে ২ মে-তেই, তবে মোদি ভরসা রাখলেন মাইন্ডগেমেই। তাঁর তুরুপের তাস হয়ে উঠল বাঙালির বাঙালিত্বের অহংকার। সিঙ্গুর, হুগলি শিল্পাঞ্চল, বাংলার মিষ্টি এবং বাংলা ভাষা।