এযাবৎকাল সংবাদমাধ্যমের সামনে আমার সন্তানের বাবা বলে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে পরিচয় দিয়ে এসেছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চললেও, তাঁরা এখনও স্বামী-স্ত্রী। অস্ফুটে একথাও বলতে শোনা গিয়েছে রত্না দেবীকে। কিন্তু বুধবার বেহালা পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী অন্য রূপে ধরা দিলেন। শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁর জীবনে এখন অতীত। এভাবেই খানিকটা সম্পর্কের দায় ঝাড়লেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। এমনকি, সংবাদমাধ্যমকে এরপর থেকে শোভন সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের জবাব তিনি দেবেন না বলেও স্পষ্ট করেছেন রত্না দেবী।
যদিও, কয়েক দিন আগে পর্যন্ত কটাক্ষ, পাল্টা কটাক্ষের পালা চলছিল। দলের নির্বাচনী ইস্তাহার নিয়ে মঙ্গলবার ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের রায় বাহাদুর রোডে তৃণমূলের কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন রত্না। সেখানে ভোটের ময়দানে শোভনের অনুপস্থিতিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। কিন্তু রত্নার সপাট জবাব, ‘শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনও প্রশ্ন করবেন না আমাকে। তিনি এখন আর আমার জীবনে নেই। শোভনকে নিয়ে কোনও কথাও শুনতে চাই না আমি।’
বেহালা পূর্বের বিধায়ক হিসেবে এখনও যদিও ইস্তফা দেননি শোভন। কিন্তু প্রায় তিন বছর যাবৎ সেখানকার অভিভাবকের ভূমিকায় নেই তিনি। মাঝে বিজেপি-র হয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এক বার সেখানে ঢুঁ মারলেও, কালো পতাকা দেখে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। সম্প্রতি বেহালা পূর্বের প্রার্থীপদ নিয়ে অসন্তোষের জেরে বিজেপি সঙ্গ ত্যাগ করেছেন শোভন-বৈশাখী। সেই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন তারকা মুখ পায়েল সরকার।
এমন অবস্থায় স্বামীর কেন্দ্রে প্রচারে নেমে সাধারণ মানুষের প্রশ্নবাণ কী ভাবে সামাল দিচ্ছেন তিনি? তা নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি? রত্না বলেন, ‘নিজের সমস্যার কারণেই বিধায়ক আসেননি। তাঁর অভাব পূরণ করেছেন এলাকার ১১ জন কাউন্সিলর। তাঁরাই ঘুরে ঘুরে মানুষের সুবিধা-অসুবিধা দেখেছেন। তাই বিধায়ক না থাকা সত্ত্বেও কোনও সমস্যা হয়নি সাধারণ মানুষের। আমার ক্ষেত্রেও হবে না।’’
উল্লেখ্য, বেহালা পূর্ব এত দিন শোভনের কেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত ছিল। তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেও একাধিক বার বেহালার সঙ্গে নিজের ‘আত্মিক সম্পর্ক’-এর কথা শোনা গিয়েছে শোভনের মুখে। তৃণমূল ওই কেন্দ্রে রত্নাকে প্রার্থী করার পরেও, গেরুয়া শিবিরের হয়ে সেখানে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই সময় রত্নাকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। সেইসময়ও রত্না জানিয়েছিলেন, শোভন আর তাঁর কেউ নন।
এদিকে, নবান্ন দখলের লড়াইয়ে বেহালার পূর্বের প্রার্থী হওয়া আর হয়নি শোভনের। দলীয় সূত্রে খবর, শোভনকে বেহালা পূর্বে দাঁড় করালে রাজনীতির চেয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ‘কেচ্ছা’ নিয়েই বেশি চর্চা হত। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই বেহালা পূর্বের প্রার্থী না হতে পেরে শোভন-বৈশাখী দু’জনে দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও, সে নিয়ে মাথা ঘামায়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।