জীবনে অনেক দুর্যোগ দেখেছেন। অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলেছেন। বহু প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। কিন্তু সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু অনেক বড় দুর্যোগ। বৃহস্পতিবারই সেকথা শোক চেপে রেখে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মেন্টর তো বটেই, মমতার ব্যক্তিগত জীবনেও বড় দাদার মতোই ছিলেন সুব্রত। তাঁদের ভাব-আড়ি আবার ভাব সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিনের সেই দাদাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মমতা।
যোগমায়া দেবী কলেজে ছাত্র রাজনীতি করার সময় সুব্রতর নজরে আসেন মমতা। তখন ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুব্রত। গোটা বাংলায় ছাত্র রাজনীতির দামাল সময় তখন। সুব্রত ভীষণ জনপ্রিয় সেই সময়। নজরে পড়তেই মমতা এবং তাঁর সঙ্গীদের ডেকে পাঠান সুব্রত। ভাল কাজ করার প্রশংসা করে দলে চলে আসার ডাক দেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন মমতা। সেই থেকে মূল ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
১৯৮৪ সালে প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে লড়েন মমতা। যাদবপুর কেন্দ্রে হারিয়ে দেন ডাকসাইটে হেভিওয়েট সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। ডেভিড আর গোলিয়াথের লড়াই ছিল সেটা। কিন্তু মমতার লোকসভায় দাঁড়ানোই হত না যদি সুব্রত সেদিন তাঁর উপর আস্থা রাখতেন। মমতা নিজেই সেই পুরনো কথা বলেছিলেন। তখন বাংলায় সিপিএম মধ্যগগনে। ইন্দিরা গান্ধির প্রয়াণের পর সেই নির্বাচনে দেশজুড়ে কংগ্রেসের সবুজ ঝড় উঠেছিল। কিন্তু বাংলায় পরিস্থিতি আলাদা ছিল। এখানে বামফ্রন্ট তখন শক্তিশালী।
সেই সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে যাদবপুর কেন্দ্রের জন্য মমতার নাম সুপারিশ করেন সুব্রতই। প্রণব বলেছিলেন, রাজীব গান্ধি চাইছেন যাদবপুরে একজন লড়াকু মেয়েকে প্রার্থী করতে হবে। মমতার নাম প্রস্তাব করেন সুব্রত। তা নিজেও জানতেন না মমতা। প্রণব মুখোপাধ্যায় সন্দিহান ছিলেন। বলেছিলেন, "ও কি পারবে?", সুব্রত নাকি বলেছিলেন, "পারলে, ও-ই পারবে।"
আরও পড়ুন না ফেরার দেশে ‘প্রাণপুরুষ’ সুব্রত, দিশাহারা একডালিয়ায় আজ শুধুই অন্ধকার
২০০০ সালে মমতার ডাকেই সাড়া দিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুব্রত। আবার ২০০৫ সালে মমতার সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে তৃণমূল ছেড়ে আলাদা মঞ্চ গড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পুরভোটে লড়েন সুব্রত। তিনি জিতলেও দলের ভরাডুবি হয়। তখন সেই মঞ্চ ভেঙে দিয়ে কংগ্রেসে ফিরে যান। আবার ২০১০ সালে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। মমতার সঙ্গে ভাব-আড়ি-ভাবের সম্পর্ক ছিল। ২০১১ সালে মমতার মন্ত্রিসভায় ঢোকার পর আমৃত্যু মন্ত্রী ছিলেন সুব্রত। সেই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মেন্টরকে হারালেন মমতা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন