সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানার ছাড়াই একাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির থেকে কারও নাম না করে নানাভাবে তোপ দেগে চলেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। দুর্গা পুজোর আগে জেলার গাইড ম্যাপ প্রকাশিত হওয়ার সময় সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। তাছাড়া বিগত কয়েক মাস ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের তেমন কোন সাংগঠনিক অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে না নন্দীগ্রামের নায়ককে। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি অরাজনৈতিক সভায় নাম না করে নিশানা করেছেন তাবড় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। ভগিনী নিবেদিতার জন্মদিনে বিবেকানন্দের বাণীকে আশ্রয় করেছেন শুভেন্দু।
এর আগে শুভেন্দু বলেছিলেন, "অতীত ভুললে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।" সেখানেই কিন্তু থেমে থাকেননি তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা। এরপর নেতাইয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়ে দেন, "অন্যরা ভুললেও তিনি নেতাই-নন্দীগ্রাম কখনও ভুলবেন না। এরপর একের পর এক অরাজনৈতিক সংগঠনের সভায় তিনি হাজির হয়েছেন। এদিন তিনি জানিয়ে দিলেন, অরাজনৈতিক সংগঠন ভারত সেবাশ্রম সংঘকে দিয়ে লকডাউনের সময় সাড়ে চার লক্ষ পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তৃণমূল কংগ্রেস করলেও কোনও রাজনৈতিক সংস্পর্শের দ্বারা সেই কাজ করা হয়নি।
আরও পড়ুন অন্যরা ভুললেও নন্দীগ্রাম-নেতাই ভুলবেন না শুভেন্দু
এদিন কোলাঘাটে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে শুভেন্দু বলেন, "মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে কারও ছাড়পত্র লাগে না। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে কোন পদ লাগে না।" তখনই তিনি উদাহরণ হিসেবে জানান, ভারত সেবাশ্রম সংঘকে দিয়ে তিনি লকডাউনে খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি বিবেকানন্দের উক্তি দিয়ে বলেন, "যত্র জীব তত্র শিব।"
নাম না করে এক হাত নিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলির। শুভেন্দুর বক্তব্য, "লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে তাঁরা থেকেছেন। কিন্তু কিছু ভোট পাখি আছে, অনেক রাজনৈতিক দল আছে। আমি কোনও রাজনৈতিক দলকে বলছি না। অনেকেই প্রয়োজনের সময় পরিযায়ীদের পাশে না দাঁড়িয়ে পরে বাজারে সস্তার মাস্ক বিলি করেছেন। সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গে থাকতে হবে। ভালোর সঙ্গে থাকতে হবে। ভোট চাই ভোট দাও পদ চাই দাও, এটা করলে হবে না।"
এদিন এর আগে ভগিনী নিবেদিতার মূর্তি উন্মোচন করেন পরিবহণমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানেও বিবেকানন্দের বাণী আউড়েছেন। তিনি বলেন, "কেউ একক শক্তিতে কোনও কাজ করতে পারে না। স্বামী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছেন আমি আমি হল সর্বনাশের মূল। আমরা আমরা যারা বলে তারাই টিকে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন “অতীত ভুললে ভবিষ্যৎ অন্ধকার”, হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
চলতি বছর ২৩ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সেভাবে দলের অনুষ্ঠানে শুভেন্দুকে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকী ঝাড়গ্রামে থেকেও তিনি এক সরকারি অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মঞ্চে গরহাজির ছিলেন। অরাজনৈতিক মঞ্চেই বেশি দেখা যাচ্ছে পরিবহণ মন্ত্রীকে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শুভেন্দু যে একটু ভিন্ন পথে চলছেন তা কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক কার্যক্রমে অনেকটাই পরিষ্কার। তাঁর বক্তৃতায় দলের নামোচ্চারণ পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে না। দাদার অনুগামী বলে সামাজিক কাজকর্ম চলছে নানা জায়গায়। কেন এই পন্থা, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন