বুধবার বিকেলে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ‘সংগঠিত’ বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। এদিন স্থানীয় ভেটুরিয়া এলাকায় শুভেন্দুর কনভয় আটকে ঝাঁটা, জুতো হাতে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। শেষ পর্যন্ত আসরে নেমে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে পুলিশ। যদিও ওই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের ‘কারসাজি’ দেখছে বিজেপি। তবে ঘাসফুল শিবিরের দাবি, ‘শুভেন্দুর প্রতি ক্ষুব্ধ নন্দীগ্রাম।‘ বিজেপি-র স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, ‘এক সময় সিপিএম চেষ্টা করেছিল শুভেন্দুকে আটকাতে। এখন তৃণমূল চেষ্টা করছে। এ ভাবে শুভেন্দুকে কেউ আটকাতে পারবে না।’
জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে চণ্ডীপুরের সভা সেরে শুভেন্দু তাঁর কনভয় নিয়ে হাজির হন নন্দীগ্রাম ২-নম্বর ব্লকের খোদামবাড়ির ভেটুরিয়া গ্রামে। সেখানে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যান তিনি। ফেরার পথেই ঘটে বিপত্তি। এলাকায় শুভেন্দু এসেছেন শুনে তাঁর কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মহিলারা। তাঁরা ঝাঁটা-জুতো হাতে হাজির হন রাস্তায়। মহিলারা যখন শুভেন্দুর কনভয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তখন দূর থেকে পুরুষরাও শুভেন্দু-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা নাজেহাল হন নারী-পুরুষের ওই সম্মিলিত বিক্ষোভ থামাতে। শেষ পর্যন্ত মহিলা পুলিশ ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের কনভয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর নন্দীগ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা প্রলয় পালের দাবি, ‘ওই এলাকায় এক কর্মীর বাড়িতে পুজোর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। ফিরে যাওয়ার সময় আচমকাই এক দল মহিলা নিয়ে এসে বিক্ষোভ দেখায় শাসকদল। অতর্কিতে শুভেন্দুর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা।’ প্রলয়ের দাবি, ‘শুভেন্দুর হাত ধরে নন্দীগ্রামে এসেছিলেন মমতা। এক সময় সিপিএম চেষ্টা করেছিল শুভেন্দুকে আটকাতে। এখন তৃণমূল চেষ্টা করছে। এ ভাবে শুভেন্দুকে কেউ আটকাতে পারবে না।’
এদিকে, নন্দীগ্রামের ভোটার তালিকা থেকে শুভেন্দু অধিকারীর নাম বাতিলের দাবি জানালো তৃণমূল। বুধবার কমিশনে চিঠি দিয়ে এই দাবি জানিয়েছে জোড়া-ফুল শিবির। হলফনামায় নিজেকে নন্দীগ্রামের ভোটার বলে উল্লেখ করেছেন সেখানকার বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূলের দাবি, সরকারি নথি অনুসারে শুভেন্দু হলদিয়ায় ভোটার। ভারতীয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫১এর ১৭ ধারা অনুযায়ী, দেশের কোনও ব্যক্তি একাধিক স্থান থেকে নিজের নাম ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত করতে পারেন না।
গত ১২ মার্চ হলদিয়ার এসডিও দফতরে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপরই জানা যায় যে, হলদিয়ার বদলে নন্দীগ্রামের ভোটার হয়েছেন তিনি। নন্দীগ্রামের নন্দনায়কবাড় প্রাইমারি স্কুলে তাঁর বুথ।
এরপরই কমিশনে নথি তুলে ধরে প্রার্থী হলফনামায় দেওয়া শুভেন্দুর তথ্য ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রামের ভোটার তালিকা থেকে শুভেন্দু অধিকারীর নাম বাতিলের দাবি জানিয়েছে জোড়া-ফুল শিবির। দিন কয়েক আগেই মনোনয়নের সময় হলফনামায় সম্পূর্ণ নথি না দেওয়ায় জন্য নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী পদ বাতিলের দাবি তোলেন শুভেন্দু। মমতা তাঁর বিরুদ্ধে চলা ৬টি ফৌজদারী মামলায় উল্লেখ করেননি বলে কমিশনে অভিযোগ করে গেরুয়া বাহিনী। তারই পাল্টা এবার শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচারে’র অভিযোগ আনলো তৃণমূল।
রাজ্যের শাসক দলের তরফে কমিশনে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর প্রার্থী মনোনয়নের হলফনামায় লিখেছেন তিনি ২১০ নম্বর নন্দীগ্রামের ৭৬ নং বুথের ভোটার। তাঁর সিরিয়াল নম্বর ৬৬৯। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি হলদিয়ারও ভোটার। ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিত্ব আইন অনুসাে একই ব্যক্তি দু’জায়গার ভোটার হতে পারেন না। তাই নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দু অধিকারীর নাম বাদ দেওয়া হোক। ওই চিঠিতেই নথি হিসাবে ভোটার লিস্টের দু’টি কপিও কমিশনে দিয়েছে তৃণমূল। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি হলদিয়ার মহাপ্রভূরচকের, অন্যটি নন্দীগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের।
পাশাপাশি নন্দীগ্রামের শুভেন্দুর বাড়ির ঠিকানার বুথ অফিসার বিজলী গিরি রায়ের নোটও কমিশনে জনা করেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রামে মৃণাল বেড়ার বাড়ির ঠিকানায় ভোটার লিস্টে নাম তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। বুথ অফিসার বিজলী গিরি রায় তাঁর নোটে জানিয়েছেন, গত ৬ মাসে শুভেন্দু অধিকারী নামের কোনও ব্যক্তিকে তিনি সশ্লিষ্ট ঠিকানায় দেখেননি।