গত ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছিলেন, ‘অধিকারী পরিবারে আরও পদ্ম ফুটবে।‘ তারপরেই বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। বেসুরো গাইতে শুরু করেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন আলঙ্কারিক পদ থেকে ইস্তফা দেন তৃণমূলের অপর সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। ক্রমশ রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে দুরত্ব বাড়ে অধিকারী পরিবারে। সেই দুরত্ব বাড়ার ইঙ্গিত আরও একবার পাওয়া গেল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। শিশির অধিকারীর সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পার্থ বাবু বলেন, ‘অন্য দলে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন শিশির দা।‘ আর এতেই ফের পূর্ব মেদিনীপুরে আরও সংঘাতের আবহ চওড়া হল এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সম্প্রতি তৃণমূলের এই প্রবীণ সাংসদ বলেছেন, ‘ভোট প্রচারে ছেলেকে (শুভেন্দুকে) আক্রমণ করা হলে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না।‘ এর আগেও একই কথা শোনা গিয়েছিল শিশির অধিকারীর কণ্ঠে। তারপর থেকে তৃণমূল নেত্রী কিংবা দলীয় সভামঞ্চে উপস্থিত কমতে থাকে অধিকারী পরিবারের। প্রধান মুখ হিসেবে উঠে আসেন শুভেন্দু বিরোধী হিসেবে জেলায় পরিচিত অখিল গিরি।
জানা গিয়েছে, শিশিরের এই মন্তব্যেই ‘চটেছে’ শাসকদল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শিশিরদা প্রবীণ মানুষ। সবাই বুঝতে পারছেন ওঁর হৃদয় কোথায়, আর কোথায় শরীর। আগে সেটা ঠিক করে নিন। তিনি যে দু’পা বাড়িয়েই রয়েছেন, সেটা তাঁর বক্তব্যেই প্রমাণিত।’
দীর্ঘ দিন ধরে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি নিয়ে চলা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র (জিতেন) তিওয়ারি মঙ্গলবার বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। বুধবার তাঁকেও কটাক্ষ করেন পার্থ। বলেন, ‘কত বার যাবেন, কত বার আসবেন। শুধু যাওয়া আর আসা। আর স্রোতে ভাসা।’’
তবে শিশিরের বুধবারের মন্তব্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে, শুভেন্দু, সৌম্যেন্দুর পর তা হলে অধিকারী পরিবার তথা শান্তিকুঞ্জের কর্তাও কি এবার পদ্মশিবিরে?
এদিকে, নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে শুভেন্দুর নাম হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন দলের রাজ্য সভাপতি। দিনে জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা। রাতে প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে দিলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেই প্রার্থী হচ্ছেন নন্দীগ্রামে। কিন্তু বিজেপির কে প্রার্থী হচ্ছেন তা এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর নামই ঘোরাফেরা করছে। প্রার্থী নিয়ে পর্যালোচনার পর বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিলেন, “নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর নাম আলোচনায় আছে।”
এরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর এখনও কোন দলই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। গত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস দ্রুত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল। এদিকে প্রথম দুদফার নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিজেপির বিশেষ কার্যকর্তাদের বৈঠকে। তবে এটা ঘোষিত কোর কমিটির বৈঠক নয় বলে জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই এই বৈঠকে হাজির ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে।