শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচির আগে সোনাচূড়ায় উত্তেজনা। এদিন নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে জনসংযোগ কর্মসূচি ছিল বিজেপি প্রার্থীর। তাঁকে দেখেই গো-ব্যাক স্লোগান তোলা হয়। এরপর তাঁর কনভয় বেরিয়ে গেলে পতাকা হাতে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিজেপি কর্মীদের আক্রমণে মাথা ফেটেছে দুই তৃণমূলকর্মীর। এই অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করে ঘাসফুল শিবির। কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে শুধু সোনাচূড়া নয়, দুই দলের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায় কালীচরণপুর এবং ভুতার মোড়। ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এমনটাই সুত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে স্থানীয় দোকান-বাজারে ঝাঁপ ফেলতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, নিজেকে তিনি বারবার বলছেন নন্দীগ্রামের 'ঘরের ছেলে', আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'বহিরাগত'। কিন্তু বারবার সেই নিজের 'ঘরেই' বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারীকে। বুধবার বিকেলের পর ফের বৃহস্পতিবার সকালে। বুধবার বিকেলে নন্দীগ্রামের ভেটুরিয়া এলাকায় শুভেন্দুর কনভয় আটকে ঝাঁটা, জুতো হাতে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। যদিও সেই বিক্ষোভকে তৃণমূলের 'ষড়যন্ত্র' বলেই দাবি করেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই রেশ মিটতে না মিটতেই ফের বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর প্রচারের সময় অশান্ত হয়ে উঠল নন্দীগ্রাম। তবে, এদিন সেই অশান্তি পুরোপুরিই রাজনৈতিক। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে এদিন রণক্ষেত্রের চেহারা নিল নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া। দু'পক্ষের বেশ কয়েকজন আহতও হন বলে খবর। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে শুভেন্দু সোনাচূড়ায় পৌঁছনোর পথেই তাঁর গাড়ি ধরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। এরপরই বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বেধে যায়। হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। পরিস্থিতি দেখে আসে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিশাল পুলিশ বাহিনীকেও নামানো হয়। যদিও শুভেন্দুর দাবি, 'মাননীয়ার হার নিশ্চিত দেখেই তাঁর বাহিনী আমাকে আটকাচ্ছে। কিন্তু কোনও লাভ হবে না। নন্দীগ্রামে আমিই জিতব।'
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরেই পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের সভা সেরে শুভেন্দু তাঁর কনভয় নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নন্দীগ্রাম ২-নম্বর ব্লকের খোদামবাড়ির ভেটুরিয়া গ্রামে। এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথেই শুভেন্দুর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মহিলারা। তাঁরা ঝাঁটা-জুতো হাতে হাজির হন রাস্তায়। মহিলারা যখন শুভেন্দুর কনভয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তখন দূর থেকে পুরুষরাও শুভেন্দুকে 'মীরজাফর' বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কোনও রকমে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে শুভেন্দুকে এলাকা থেকে বের করে পুলিশ।
কিন্তু কেন বারবার শুভেন্দুকে নিজের জায়গাতেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে বলে শুভেন্দুকে অতিরিক্ত চাপ নিতে হচ্ছেই। আর তা করতে গিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিও করতে হচ্ছে তাঁকে। গতকালই কাঁথিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু ফের বলেছেন, 'তৃণমূলকে ফেরালে এবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ হবে।' শুভেন্দুর এই রূপ অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। আবার নন্দীগ্রাম আন্দোলনকেও নিজের বলে দাবি করছেন তিনি। মমতার অবদানকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। নিজেকে 'ঘরের ছেলে' বলে দাবি করলেও সদ্যই নন্দীগ্রামের ভোটার লিস্টে নিজের নাম তুলেছেন নব্য বিজেপি নেতা। সেইসঙ্গে নন্দীগ্রামে মমতার চোট পাওয়ার ঘটনাতেও ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশই। ফলে বারবার শুভেন্দুর বিক্ষোভের মুখে পড়া প্রত্যাশিত বলেই মত অনেকের।