দলের নির্দেশ, মন্ত্রীর ধমকেও কাজ হয়নি। কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন ঘিকে বেআব্রু তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। দলের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানতে রাজি হয়নি তৃণমূলেরই ১২ জন কাউন্সিলর। শেষমেষ ভোটাভুটিতে জয়ী অন্য চেয়ারম্যান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরতে পরতে নাটক। শেষ পর্যন্ত বেগতিক দেখে সরকারি নির্দেশে বাতিল করা হয় কালনায় চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়া। যা ঘিরে অস্বস্তি বাড়ে শাসক শিবিরের। শেষমেষ কড়া পদক্ষেপ হিসাবে কালনার দুই বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরকে সাসপেন্ড করা হয় দল থেকে।
জোড়া-ফুল বুধবার সন্ধ্যায় সাসপেন্ড করেছে কালনার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলার অনিল বসু ও এদিনের ভোটাভুটিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পাওয়া তপন পোড়েলকে। পদত্যাগ করেছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিউটন মজুমদার।
অন্যদিকে, বর্ধমান পুরসভায় চেয়ারম্যান হতে না পারার ক্ষোভে কাউন্সিলর ও বর্ধমান শহর সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অরূপ দাস।
আরও পড়ুন- মন্ত্রীর রক্ষাতেও হল না শেষ রক্ষা, শেষমেষ বাতিল কালনার চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়া
কালনা পুরসভায় এ দিন দিনভর উত্তেজনা ছাড়য়। পুরসভার নব নির্বাচিত কাউন্সিলারদের এদিন ছিল শপথ গ্রহন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তৃণমূলের ১৭ জন কাউন্সিলার ও একজন বাম কাউন্সিলার নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত হন। তবে শপথ গ্রহণের আগে থেকেই সেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়ায়। এক পক্ষ দলের মনোনিত কাউন্সিলারকে চেয়ারম্যান মনোনিত করার দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। অপর পক্ষ দলের ঘোষিত চেয়ারম্যানের বিরোধীতায় স্বোচ্চার হয়। এই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌছান রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা কলনা পুরসভা ভোটে দলীয় পর্যবেক্ষক ও বিধায়ক অলোক মাঝি। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়েও এই দুই তৃণমূল নেতার কেউ-ই বিক্ষুব্ধদের বাগে আনতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান হলের বাইরে দলের কর্মীদের নিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন কালনা পুরসভা ভোটের তৃণমূল পর্যবেক্ষ অলোক মাঝি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে উত্তেজনা আরও চরমে ওঠে। কালনার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজনা সামালদেয়। এরই মধ্যে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায় কালনা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলার অনিল বসুর। বাকবিতণ্ডা মাঝেই স্বপন দেবনাথের সামনেই পুরসভা ভবনের দোতোলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ মারাতে উদ্যত হন অলোকবাবু। পরে মন্ত্রীর চরম বিরোধীতা সত্ত্বেও শপথ গ্রহনের পর বিক্ষুব্ধ ১২ জন কাউন্সিলার চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোটা ভুটির দাবি তোলেন। বন্ধ ঘরে ভোটা ভুটিতে তাঁরা দলের মনোনিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আনন্দ দত্তকে হারিয়ে দিয়ে তপন পোড়েলকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।
ক্ষোভে ফেটে পড়েন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, 'বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের সাসপেন্ড করা হবে। পিছন থেকে ছুড়ি মানা হল।'
আরও পড়ুন- পুরবোর্ড গঠন ঘিরে নাস্তানাবুদ অবস্থা, কাদের মদতে? তৃণমূলেই ঘুরপাক নানা প্রশ্নের