মুকুল রায়ের সঙ্গে অপর এক বিজেপি নেতার সন্দেহজনক টেলিফোন কথোপকথন কে ফাঁস করল? কে ট্যাপ করল? রবিবার দিল্লিতে এই প্রশ্ন তোলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। শনিবার, প্রথম দফার ভোটের দিন তৃণমূল কংগ্রেস এক টেলিফোন রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আনে। সেখানে বিজেপি নেতা মুকুল রায় আর শিশির বাজোরিয়াকে কমিশনের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগে কাঠগড়ায় তোলে শাসক শিবির। ফাঁস হওয়া টেলিফোনিক কথোপকথনে খানিকটা সেই ইঙ্গিত। এমনটাই দাবি ঘাসফুল শিবিরের। যদিও সেই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
এদিকে, সেই অভিযুক্ত কল রেকর্ডিং প্রসঙ্গে এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘দুই জন বিজেপি নেতা অফিসারদের বদলি নিয়ে ফোনে কথা বলেছেন। এই ধরনের দাবি লিখিত আকারে দিতে হয়। এতে কোনও লুকোচুরি নেই। তবে এই প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে কে সেই ফোন ট্যাপ করেছে?’
অপরদিকে, প্রথম দফার ৩০টি আসনের মধ্যে ২৬টি আসনে জয় পাবে বিজেপি। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ২ মে-র পর বাংলায় ২০০-র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে গেরুয়া শিবির। এমন ইঙ্গিতও দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘নন্দীগ্রামে পরিবর্তন হলেই বাংলায় পরিবর্তন। রাজ্যে তোষণের পরিবেশ আর দুর্নীতির রাজনীতি। এর থেকে মুক্তি চায় বাংলা।‘
এর আগে বাংলায় ভোটে হিংসা হত। ভোট মানেই হিংসা অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু প্রথম দফার ভোট শান্তিপূর্ণ। এই মন্তব্য করে কমিশনের কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানান অমিত শাহ। ‘ওরা ভাল কাজ করেছে। প্রথম দফায় ৮৫% ভোট পড়েছে’, এদিন বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামি দফায় ভোটের এই প্রথা বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শনিবার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে সহায়তা চেয়ে ফোন করেছিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রলয় পালকে। শনিবার দুপুরে ভাইরাল হয় মমতা-প্রলয় কথোপকথনের সেই অডিও ক্লিপ। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ ওই বিজেপি নেতা ‘দিদি’র আবেদন অস্বাকীর করলেও ভাইরাল ওই অডিও ক্লিপ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই সেই চাঞ্চল্যে আরও মাত্রা যোগ হল। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আরেকটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আনেন। যেখানে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি তথা বঙ্গ ভোটে বিজেপির প্রার্থী মুকুল রায়কে কমিশনে এজেন্ট বসানোর নিয়মাবলী বদলের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। প্রকাশিত অডিওতে শোনা যাচ্ছে, কমিশনের উপর এই ইস্যুতে বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়াকে চাপ সৃষ্টির জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন মুকুল রায়।
কমিশন-বিজেপি আঁতাঁত নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন মুকুল রায়ের গোপন অডিও ফাঁস করে নেত্রীর সেই অভিযোগই পোক্ত করার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন বিকালে কুণাল ঘোষ একটি অডিও ক্লিপ তুলে দেন সংবাদমাধ্যমের হাতে। তাঁর দাবি, ওই অডিও ক্লিপে যে দু’জনের গলা শোনা গিয়েছে। তাঁদের একজন মুকুল রায় ও অপরজন হলেন বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া। কুণাল প্রকাশিত ভিডিও ক্লিপ অনুযায়ী, মুকুল রায় শিশির বাজোরিয়াকে বলেছেন- নির্বাচন কমিশন বুথে এজেন্ট হওয়ার নিয়ম পরিবর্তন না করলে বিজেপি অর্ধেক বুথে এজেন্টই বসাতে পারবে না।
এরপরেই কুণাল মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে নির্বাচন কমিশন কার্যত সর্বদল বৈঠকে কোনও কিছু না জানিয়ে এখন হুট করে বিধি বদলের কথা জানিয়েছে। কমিশন জানায়, এলাকার বাসিন্দা না হলেও যে কেউ নিজের বিধানসবা কেন্দ্রের যেকোনও বুথে যে কোনও রাজনৈতিক দলের এজেন্ট হতে পারবে।
অর্থাৎ কমিশন বিজেপির কথামতো তাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে বুথের এজেন্ট হওয়ার নিয়মে রাতারাতি পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ। যা কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললো।