একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সবক শিখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে মজবুত করার ডাক দিলেন বিমল গুরুং। রবিবার প্রকাশ্য সভায় হাজার হাজার লোককে জমায়েত করিয়ে বিমল গুরুং বুঝিয়ে দিলেন পাহাড়ে তিনিই শেষ কথা। সেই সঙ্গে এদিন তিনি নানান দূর্নীতির অভিযোগ তুললেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বর্তমান নেতা বিনয় তামাং, অনিত থাপার বিরুদ্ধে।
শিলিগুড়ির বুকে হাজার লোকের জনসমাগমে প্রকাশ্য সভায় পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড গড়ার ডাক দিলেন একদা মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং। গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন করতে গিয়ে ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে ফেরার হয়ে যান বিমল গুরুং রোশন গিরি-সহ মোর্চার জনা কয়েক প্রথম সারির নেতা। সেই সময় গুরুং এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা-সহ যাবতীয় সম্পত্তি ক্রোক করে নেয় প্রশাসন। জারি হয় লুক আউট নোটিস। বিমল গুরুং বিভিন্ন সময় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করলেও তা নাকচ হয়ে যায়। অবশেষে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে পাহাড়ে ফেরার পথ প্রশস্ত হয় বিমল-রোশনদের। আর তৃণমূল কংগ্রেসের সহযোগিতা ও প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই হাজার হাজার লোকের জমায়েত করিয়ে শিলিগুড়ির ইন্দিরা গান্ধী ময়দানে সভা করলেন বিমল গুরুং।
এদিন বেলা ১১টায় বিমলদের সভা হওয়ার কথা থাকলেও ডালখোলায় রেল অবরোধের ফলে আজম নগরে দার্জিলিং মেল থেকে নেমে সড়কপথে আসতে হয় বিমল গুরুং, আশা গুরুং, রমেশ আলেদের। বিকেল প্রায় সাড়ে ৪ টেয় মঞ্চে ওঠেন বিমল গুরুং। মঞ্চে উঠেই স্লোগান তোলেন পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের। এরপর তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন বিজেপির বিরুদ্ধে। এদিন তিনি বলেন, "পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিজেপিকে লক্ষ লক্ষ ভোটে বারবার জিতিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। অথচ মোর্চার ভোটে জয়লাভ করেও পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে উদ্যোগ নেননি নরেন্দ্র মোদী। পাহাড়ের ১১টি জনজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললেও সেটাও করেনি বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার।"
আরও পড়ুন কলকাতায় আবির্ভাব বিমল গুরুংয়ের! আচমকা হাজির গোর্খা ভবনে
তারপর তিনি আরও বলেন "এই মুহুর্তে পাহাড়ের মানুষ আর বিজেপিকে বিশ্বাস করে না। দার্জিলিং সাংসদ রাজু বিস্তার উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পক্ষে। তাই এবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড় তরাই ডুয়ার্সের গোর্খারা সবক শেখাবে বিজেপিকে। পাহাড়ে বিজেপির চ্যাপ্টার ক্লোজড। এবার তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত মজবুত করার শপথ নিয়েছেন। তারা পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের সব কয়টি আসন তুলে দিতে চান তৃণমূলের ঝুলিতে। তিনি দেখতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয়বারের মতো বাংলার মসনদে।"
বিনয় তামাং-অনিত থাপাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এদিন বিমল গুরুং বলেন, শিলিগুড়ির মতো তিনি একে একে কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিকেও সভা করবেন। তাকে আটকানোর ক্ষমতা কারওর নেই। তার অবর্তমানে পাহাড় উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা দূর্নীতি করেছে বিনয়-অনিত থাপারা। দূর্নীতি হয়েছে নানান সরকারি প্রকল্পে। সময় এলে তার সব হিসেব নেবেন বলেও জানান বিমল গুরুং। এদিন বিমল গুরুংয়ের জনসভায় হাজির হয়েছিলেন পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ। এদিনের জনসমাবেশ দেখে তৃণমূলের মুখে হাসি ফুটলেও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিনয় তামাং-অনিত থাপাদের। বিমল গুরুং আপাতত কয়েকদিন শিলিগুড়িতে থেকেই সংগঠনকে মজবুত করার কাজ চালিয়ে যাবেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিমলের সমর্থন কতটা তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দেয়, তা সময়ই বলবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন