জল্পনার অবসান। তৃণমূল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। জল্পনা উসকে বুধবার ৩.৫৭ মিনিটে বিধানসভায় পৌঁছোন শুভেন্দু অধিকারী। পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রিসিভ সেকশনে গিয়ে বিধানসভার সচিবের উদ্দেশে ইস্তফা পত্র জমা দেন তিনি। ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষকে। যদিও সচিবের কাছে ইস্তফা দেওয়া যায় না বলে দাবি করেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বিধানসভায় গিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান বিমানবাবু। ফলে আদৌ শুভেন্দুর ইস্তফা গৃহিত হল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেল।
১৮ দিন আগেই মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই বিধায়ক পদ ও দল থেকে তাঁর ইস্তফা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়। অবশেষে এ দিন বিধানসভায় এসে শাসক দলবের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
ইতিমধ্যেই শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগ দান নিয়ে নানা কথা উঠে আসছে। চলতি সপ্তাহে অমিত শাহ রাজ্য সফরে আসছেন। বেশ কয়েকটি সভা করবেন। সূত্রের খবর, তারই একটিতে শাহের উপস্থিতিতে গেরুয়া দলে যোগ দিতে পারেন শুভেন্দু। এ দিন তাঁর বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফায় সেই জল্পনাই যেন পোক্ত হল। তবে, এখনও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্য পদ ছাড়েননি শুভেন্দু অধিকারী।
তৃণমূল পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফা প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি বলেছেন, 'বাংলার গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে তাঁর আগামী সিদ্ধান্ত জানি না। বিজেপি তাঁকে স্বাগত জানাবে কিনা দল সিদ্ধান্ত নেবে।' উল্লেখ্য, শুভেন্দু 'বেসুরো' হতেই এর আগে তাঁকে পদ্ম বাহিনীতে স্বাগত জানানোর কথা বলেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ অর্জুন সিংরা। এ দিন দিলীপবাবু বলেছেন, 'তৃণমূলে গণত্ন্দ্র নেই। উনি আসতে চাইলে ওনাকে স্বাগত জানানো হবে।'
অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'ও চলে গিয়েছে ভাল হয়েছে। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। এত বছর ধরে সব ভোগ করে নিয়ে চলে গেল। এরা যত যায় ততই বাল। ' শুভেন্দু-তৃণমূল দৌত্যে প্রধান ভূমিকা যাঁর ছিল সেই সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 'শুভেন্দু দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। দল দলের মতই চলবে। ওর আদর্শের কথা ভ্রান্ত। পদের উচ্চাশায় দরাদরি করছিলেন, এখন দেখা যাক বিজেপিতে গিয়ে ও কি পায়।'
গত কয়েক মাস ধরেই তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নাম না করেই সুর চড়িয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দাদা'র অনুগামী ব্যানারে দল ও নেত্রীর ছবি বাদ দিয়ে শুভেন্দুবাবুর ছবিও কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে দেখা যায়। ফলে তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক বাড়ে। তার মধ্যেই শাসক দলের এই বিধায়ককে নিশানা করেন ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। পরে শুভেন্দুর প্রভাব বিবেচনা করে দল ও শুভেন্দুর দূরত্ব ঘোচাতে উদ্যোগী হন সাংসদ সৌগত রায়। অভিষেক ব্যানার্জী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পিকে-র উপস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক হয়। প্রথমে সেই বৈঠক ফলপ্রসূ বলে দাবি করেন সৌগতবাবু। কিন্তু, পর দিনই বেঁকে বসেন দলের দোর্দদণ্ডপ্রতাপ বিধায়ক। বৈঠকের নির্যাস পাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
পরে ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিত্ব ছাড়েন শুভেন্দু অধিকারী। তখন থেকেই তাঁর বিধায়ক পদ তেকে ইস্তফা নিয়ে নানা জল্পনা চলছি। অবশেষে এ দিন তার অবসান হল।
শুভেন্দু অধিকারী দলের তরফে মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম সব বেশ কয়েকটি জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন। প্রায় সব জেলাতেই তৃণমূলের অন্দরে তাঁর প্রভাব ও অনুগামী রয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে শুভেন্দুর বিধায়ক পদে ইস্তফায় ভোটের আগে তৃণমূলের সংগঠনে কী প্রভাব পড়ে সে দিকেই এখন নজর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন